ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা - চন্দন পাউডার ব্যবহারের নিয়ম
ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা - চন্দন পাউডার ব্যবহারের নিয়ম
ত্বকের যত্নে চন্দন ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। চন্দনের ঔষধি গুনাগুন ত্বককে রাখে কমল ও সুন্দর। এছাড়াও ত্বকের ব্রণ, বলিরেখা, বয়সের ছাপ, রোদে পোড়া, ইত্যাদি যেকোনো সমস্যা দূর করে। ত্বককে করে তোলে সুন্দর ও লাবণ্যময়। তাছাড়া ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা এবং চন্দন পাউডার ব্যবহারের ফলে ত্বকে যে সৌন্দর্য তৈরি হয় তা অন্য কোন ভাবে পাওয়া যাবে না।
চন্দন মানুষের ত্বক ও সুস্বাস্থ্যের জন্য দুর্লভ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ অনেক ভাবে মানুষকে সাহায্য করে থাকে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে চন্দন ব্যবহারের বিকল্প কিছু নেই। আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা চন্দনের উপকারিতা ও চন্দন ব্যবহারের নিয়ম সহ সকল বিষয় বিস্তারিত জানব।
চন্দনের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ
চন্দন সুগন্ধি যুক্ত চিরহরিৎ রোমহীণ একটি বৃক্ষ। চন্দনের আছে হাজারো ঔষধি গুণ। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় চন্দনের বহু ব্যবহার আছে। এই গাছ ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। চন্দন গাছ সাধারণত রাস্তার ধারে বা আবাসভুমি্র পাশে জন্মায়।
এক একর জমিতে চন্দন গাছ চাষ করে ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা যায়। কেউ যদি একটি গাছ চাষ করতে পারে। তাহলে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লাভ করতে পারবে। তবে অতি লাভজনক এই চাষ সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। দুই প্রকারের চন্দন পাওয়া যায়-শ্বেত চন্দন ও রক্ত চন্দন।
শ্বেত চন্দনের আদি নিবাস ভারতের বিন্ধাপর্বতের কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু। এছাড়াও ভারতের উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ। শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন ভাবে কোথাও দেখা যায়। এছাড়া ঢাকার বলধা গার্ডেনে ও বোটানিকাল গার্ডেনে শ্বেত চন্দনের গাছ আছে।
রূপচর্চায় চন্দনের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। প্রাচীনকালে রূপচর্চার অন্যতম মাধ্যম ছিল চন্দন। বর্তমানে রূপচর্চায় বিভিন্ন কসমেটিক সুগন্ধযুক্ত চন্দন ব্যবহার হচ্ছে। চন্দনা রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকের ব্রণ ও বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। এছাড়াও ত্বকের কালো দাগ, রোদে পোড়া দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে। ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা অনস্বীকার্য।
চন্দনকে ঔষধি গুণের সমাহার বলা হয়। এতে এন্টিপায়োরেটিক, এন্টিসেপটি্ক, অ্যাসকোবেটিক, এবং মূত্রবর্ধক গুণ আছে। চন্দন কাঠ ব্রংকাইটিস, ডিসুরিয়া (প্রসবের সময় জ্বালা করা) ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রেও কাজে লাগে। চন্দন যে কোন ব্যাথা বা ফোলার সমস্যা সমাধানে কাজে লাগে।
ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা অনেক। চন্দন অনেক ভাবে ব্যবহার করা যায়। চন্দনের ফেসপ্যাক, চন্দনের পাউডার, চন্দন গুড়া সকল উপাদানে বিভিন্নভাবে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়। চন্দন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা বহু গুনে গুণান্বিত। ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ব্রণ দূর করতেঃ ব্রণের সমস্যা সমাধানে চন্দন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চন্দন ত্বকের তেলতেলে ভাব কমিয়ে ব্রণ ও র্যাশ কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা থাকলে চন্দনের সঙ্গে বিউলির ডাল ও গোলাপজলের প্যাক আধাঘন্টা মুখে লাগিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ত্বকে বেশি তৈলাক্ত ভাব থাকলে গোসলের আগে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে চন্দন গোলাপ জলে মিশিয়ে ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দু এক সপ্তাহ চন্দন ব্যবহার করলে ব্রনের সমস্যা দূর হবে। আর ত্বক ও হবে উজ্জ্বল মসৃণ।
বলিরেখা দূর করতেঃ চন্দনে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা মুখের বলিরেখা ও চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বয়স ধরে রাখতে বা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে চন্দনের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে।
তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। কালচে দাগ দূর করার জন্য চন্দনের সঙ্গে নারিকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। তবে ত্বক খুব স্পর্শকাতর হলে লেবুর রস না ব্যবহার করাই ভালো।
এভাবে চন্দন ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা দূর হবে।
রোদে পোড়া ভাব দূর করতেঃ চন্দন পাউডারের সাথে লেবুর ও শসার রস একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে রোদে পোড়া ভাব আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে। নিয়মিত প্রতিদিন রোদ থেকে ফিরে অবশ্যই এটা ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চন্দনের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। চন্দন গুড়া, গোলাপজল, লেবুর রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত চন্দন ব্যবহার করলে ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। চন্দনের পাউডার ও মুখে ব্যবহার করলে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
ত্বকে তৈলাক্ত ভাব দূর করতেঃ চন্দনের ব্যবহার ত্বকে তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে। চন্দনের সাথে গোলাপজল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব চলে যাবে। এতে ত্বকে ব্রণের পরিমাণও কমে যাবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
লাল চন্দনের উপকারিতা
আয়ুর্বেদে অনেক ফুল, ফল, গাছপালা এবং অন্যান্য জিনিস আছে যা মানব জীবনের খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা কেবল গাছপালা থেকে প্রাপ্ত উপকরণ দিয়ে সম্পন্ন সুস্থ থাকতে পারিনা। লাল চন্দন এমনই একটি ঔষধি উদ্ভিদ যা দিয়ে অনেক উপকারিতা লাভ করা যায়। লাল চন্দনের বৈজ্ঞানিক নাম টেরোকার্পাস সান্টালিনাস এল।
এটি রক্ত চন্দন, হার্টউড, লাল চন্দন কাঠ, অনুকাম এবং লাল চন্দন বিভিন্ন নামে পরিচিত। লাল চন্দন কাটিতে অনেকগুলো ফটোকেমিক্যাল রয়েছে যা পলিফ্যানলিক যৌগ গ্লাইকোসাইড প্রয়োজনীয় তেল, ফ্ল্যাভোনয়েডস, টেনিনস এবং ফেনলিক অ্যাসিড। সামগ্রিকভাবে লাল চন্দন একটি খুব উপকারী কাঠ যা ব্যবহার করে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লাল চন্দনের আরো কিছু উপকারিতা-
ত্বকের সমস্যা নিরাময়েঃ ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে লাল চন্দন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লাল চন্দনে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া, ত্বকে রোদে পড়া ভাব ইত্যাদি সমস্যা দূর করে থাকে। ত্বকে উজ্জ্বলতা ও লাবণ্যময় করে তুলতে লাল চন্দনের ভূমিকা অপরিসীম।।
হাঁপানি প্রতিরোধেঃ রক্ত চন্দন তেলে রয়েছে এন্টিস্পজোমেটিক এটি পেশি শীতল করতে পারে। সেই সঙ্গে যে কোন গুরুতর খিচুনি বন্ধ করতে ক্ষমতা রাখে। সংবেদনশীল পেশির সংকোচন ঠান্ডা লাগা ও সর্দি কাশি থেকে রক্ষা করে। ঠান্ডা লাগা, বা টান লাগায় এই তেল খুবই উপকার করে।
রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেঃ চন্দন কাঠ বা লাল চন্দন রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই আফটার শেভ ও ফেসিয়াল টোনার হিসেবে এটি খুবই ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চন্দনের গুরার সাথে সামান্য কপূর ও পানি মিশিয়ে কোন পোড়া, এলার্জি, ফুসকুড়িতে লাগালে অনেক উপকার হয়।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ এই সুগন্ধি কাঠ মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে ও অকারণে মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা থেকে শান্ত রাখে। চন্দন স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও মনোযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
জীবাণু নাশকঃ চন্দন কাঠের তেল জীবাণুনাশক হিসাবে দারুন কার্যকর এই তেলের সুগন্ধ কীটপতঙ্গ কে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এই চন্দনের তেল ইনসেক্ট রেপেলেন্ট এবং কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মূত্রনালী সংক্রমণঃ চন্দনের এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উপাদান রেচনতন্ত্র বা ইউরিনারি সিস্টেমের জালা ভাব উপশম করে, আরাম দেয় এবং সহজেই প্রসাব বেরিয়ে যাবার পথ করে দেয়। এছাড়াও ক্ষতিকারক টক্সিন সহজে বের করে দিয়ে সংক্রমণ নিরাময়ে সাহায্য করে।
সাদা চন্দনের উপকারিতা
চন্দনকে ঔষধি গুণের খনি বলে মনে করা হয়। সাদা চন্দনের তেলে অ্যান্টিক্যান্সারের গুণ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি চন্দনের গাছ থেকে আলফা স্যান্টালোল এ এন্টিক্যান্সার ও ক্রোমোপ্রিভেন্টিভ গুণ পাওয়া যায়। ত্বকের এলার্জি দূর করতে চন্দনের উপকারিতা অনেক বেশি। অতিরিক্ত চিন্তা বমি বমি ভাব মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে শ্বেত চন্দন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চন্দনের এন্টিপায়োরেটিক গুণ জ্বর কমাতে সাহায্য করে। চন্দনের তেল দিয়ে অ্যারোমাথেরাপি নেওয়া যায়। গায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে চন্দনের তেল পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়া স্যান্ডেলউডেও সমান গুনাগুন আছে সেগুলো ব্যবহার করলেও এই সমস্যা সমাধান পাওয়া যায়।
ত্বক উজ্জ্বল করতে চন্দনের ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম
ত্বকের যত্নে চন্দন বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রূপচর্চায় চন্দনের সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানানো হয়। যা ত্বককে অনেক উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। চন্দনের বিভিন্ন ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম দেওয়া হল-
চন্দন ও দুধের ফেসপ্যাকঃ পাউডার, চন্দনের তেল ও কয়েকফোঁটা গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে চন্দনের পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এই পেস্ট মুখে ঘাড়ে ও গলায় ভালো করে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখতে হবে। পরে ভালো করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে তাতে মশ্চারাইজার লাগাতে হবে। তাহলে ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হয়ে ত্বক মসৃণ উজ্জ্বল হবে।
চন্দন নারকেল এবং বাদাম তেলের ফেসপ্যাকঃ চন্দনের গুড়ার সাথে, নারকেল, বাদাম তেল ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে। তারপর মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট শুকিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই প্যাকটি খুবই ভালো কাজ করে। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব শুষে নেয়। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।
চন্দন টমেটোর রস ও মুলতানি মাটির ফেসপ্যাকঃ চন্দন পাউডারের সাথে টমেটোর রস ও মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই প্যাকটি খুবই কার্যকরী। ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ত্বকে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে।
চন্দন ও কমলার খোসার ফেসপ্যাকঃ চন্দন পাউডার, কমলার খোসার পাউডার ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানাতে হবে। সেটা মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। তাহলে ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল হবে। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
চন্দন, লেবু ও মুলতানি মাটির ফেসপ্যাকঃ চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, লেবুর রস ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে হবে। তারপর ২০-৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে। ফেসপ্যাকটি সব রকমের ত্বকের জন্য উপযোগী। এই ফেসপ্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে।
শসা ও চন্দনের ফেসপ্যাকঃ শসা এবং চন্দন ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী একটি উপাদান। এই দুটি উপাদান ত্বকের যত্নে বহুদিন থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। এগুলো ত্বককের যত্নে খুবিই কার্যকরী উপাদান। সব ধরনের ত্বকের যত্নে শসা একটি কার্যকরী উপাদান।
শসাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে যা আমাদের ত্বককের গভীরে গিয়ে কোষে শক্তি যোগায়। ফলে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল, মসৃণ ও লাবণ্যময়। এছাড়া শসা তে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে পারে না।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন সময় উড়ে যায়। শসা ত্বকের এই পোড়া দাগ দূর করে এবং ত্বককে নরম উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত রোদ থেকে এসে যদি শসা ও চন্দনের তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করা হয়। তাহলে ত্বকে রোদের পড়া ভাব চলে যাবে।
চন্দন পাউডার ব্যবহারের নিয়ম
অনেকেই জানেনা চন্দন কাঠ কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। আবার অনেকের কাছে এই কাঠ ব্যবহার করা খুবই ঝামেলা মনে হয়। কিন্তু এই কাঠ অত্যন্ত উপকারী। চন্দন পাউডারের সাহায্যে ফেসপ্যাক তৈরি করা খুবই সহজ এবং সময় অনেক কম লাগে। চন্দন কাঠ ব্যবহারের চেয়ে চন্দন পাউডার ব্যবহার করা বেশি সহজ।
একটি পাটায় পানি নিয়ে চন্দন কাঠ আস্তে আস্তে ঘষে নিতে হবে। দুই মিনিট পর দেখা যাবে কাঠ গলে ঘন পেস্ট তৈরি হয়েছে। তারপর আঙ্গুল দিয়ে বাটিতে তুলে ব্যবহার করা যাবে এই চন্দন পাউডার।
বিভিন্ন উপাদানের সাথে এই চন্দন পাউডার দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। যেমন-
- চন্দন ও দুধের ফেসপ্যাক
- চন্দন, নারকেল এবং বাদাম তেলর ফেসপ্যাক
- চন্দন, টমেটোর রস এবং মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
- চন্দন ও কমলার খোসার ফেসপ্যাক
- চন্দন লেবু মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
চুলের যত্নে চন্দনের ব্যবহার
চুলের যত্নে চন্দনের উপকারিতা অনেক বেশি। চুলের যত্নে রক্ত চন্দন অনেক বেশি ভালো কাজ করে। অনেকে চুলের যত্নে কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা পছন্দ করেনা। সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান রক্ত চন্দন ব্যবহার করা যেতে পারে। রক্ত চন্দন চুলের যত্ন ব্যবহারের ফলে চুল শক্ত হবে এবং চুল পড়া রোধ করে চুলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে।
বর্তমানে সৌন্দর্য শিল্পে বিশেষ করে চুলের যত্নে রক্ত চন্দনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রক্ত চন্দন চমৎকার একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলকে শক্তিশালী ও পুষ্ট করে তোলে।
এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা মাথার ত্বকের সংক্রমণ, খুশকি এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। এটি মাথা শীতল করতে এবং মাথায় চুলকানি বা জ্বালা পোড়া প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে রক্ত চন্দনের বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করা যায় যেমন চুলের তেল, চুলের মাস্ক এবং শ্যাম্পু। নারিকেল তেল বা দইয়ের সাথে রক্ত চন্দন মিশিয়ে বাড়িতে হেয়ার প্যাক তৈরি করে যায়। তারপর হেয়ার প্যাকটি চুলে এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে স্বাস্থ্যে উজ্জ্বল সুন্দর চুল পাওয়া যাবে।
চন্দন কাঠ চেনার উপায়
বাজারে আসল চন্দন কাঠ পাওয়া অনেক কঠিন। আমরা সচরাচর যে চন্দন কাঠটা কিনি সেটা প্রায় ক্ষেত্রেই নকল হয়। যেটা আসল চন্দন কাঠ নয় সেটা ভেতরে অনেকটা নরম হয়। পেয়ারা কাঠেও অনেক সময় চন্দনের সুগন্ধি বসানো হয়। কিছুদিন পরেই সুগন্ধ আর থাকে না। তাই চন্দন কাঠ কেনার আগে ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কাঠের গায়ে আঁচড় দিয়ে দেখতে হবে। চন্দন কাঠটি আসল হলে সঙ্গে সঙ্গে হাতে একটি সুগন্ধ পাওয়া যাবে।
চন্দন কাঠটি আসল হলে শুধু হাতেই নয় চারপাশে সুগন্ধাতে ভরে যাবে। এবং শুধু কয়েকদিন নয় আসল চন্দন কাঠের সুগন্ধ কয়েক দশক পর্যন্ত থাকে। এই কাঠ সাধারণত ভারী, হলুদ এবং খসখসে হয়ে থাকে। আসল চন্দন কাঠ কিনে ব্যবহার করতে পারলে এটা উপকার অনেক এবং অনেক টাকা খরচ করে রূপচর্চা করতে হবে না। এই এক চন্দন কাঠি আপনার সৌন্দর্য তৈরি করে দিবে।
পরিশেষে
রূপচর্চায় চন্দন ম্যাজিকের মতো কাজ করে। চন্দন এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেখানে সৌন্দর্য চর্চার সবথেকে বেশি উপদান রয়েছে। ত্বকের যত্নে চন্দনের উপকারিতা এত বেশি যে এর গুনাগুণ যতই বলি তবুও কম হয়ে যাবে। প্রাচীনকাল থেকেই নারীরা সুন্দর চর্চায় চন্দনকে প্রধান হিসাবে ব্যবহার করে এসেছে। আসল চন্দন ব্যবহারে সৌন্দর্যের উজ্জ্বলতা বহু গুনে বেড়ে যায়।
চন্দন পাউডার ব্যবহার করা সব থেকে বেশি সহজ। আমি তো নিয়মিত চন্দন পাউডার ব্যবহার করি। এর ফলাফল এত ভালো যে নিয়মিত ভাবে এটা ব্যবহার করলে যে কেউ এর ব্যবহারে নিয়মিত হয়ে
যাবে। আগেই বলেছি চন্দনের উপকারিতা সম্পর্কে যতই বলি কম হয়ে যাবে তাই বলছি আমি তো নিয়মিত চন্দন ব্যবহার করি আপনারাও করবেন। আর চন্দন ব্যবহারে তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় সকলেই চন্দন ব্যবহার করতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url