খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - খেজুর খাওয়ার নিয়ম
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - খেজুর খাওয়ার নিয়ম
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আর খেজুরের মধ্যে সেই সকল উপাদান পাওয়া যায় যা সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। খেজুর তেমনিই একটি স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। খেজুর প্রাকৃতিকভাবেই অতি মিষ্টি একটি ফল যা শরীরে চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এটি প্রাচীনকাল থেকে মানুষের খাদ্য তালিকায় একটি বড় স্থান দখল করে রয়েছে। খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে তবে খাওয়ার উপর নির্ভর করে অনেক সময় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে উপযুক্ত সময় বুঝে খেতে হবে। আজকে এই পোস্টের মধ্যেমে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও খেজুর খাওয়ার সময় বিস্তারিত জানব।
খেজুরের পুষ্টিগুন
পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ফলটিতে রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। খেজুরে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফাইবার, মিনারেল সহ নানা উপাদান। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা খেজুরের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
খেজুরের প্রকারভেদ
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সৌদি আরবের খেজুর। সৌদি আরবে গেলে মানুষ খেজুর সাথে নিয়ে আসবেই। সৌদি আরবের বাজারে বিভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। আর সৌদি আরবে খেজুরিই বেশি বিক্রি হয় আমাদের দেশে। তেমনিই কিছু খেজুরের নাম-
আজওয়া খেজুরঃ খেজুরের মধ্যে আজুয়া খেজুর সব থেকে জনপ্রিয় একটি খেজুর বলা হয়ে থাকে যে মদিনা শরীফের সর্বোত্তম খেজুর এটি। হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইফতার করতেন এই খেজুর দিয়ে। দেখতে কালো, বিচি ছোট, এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এই খেজুর। তা ছাড়া এই খেজুরের দামও অন্যান্য খেজুরের থেকে বেশি।
বলা হয়ে থাকে যে, এই খেজুর খেলে গর্ভবতী নারীর প্রসাব বেদনা কম হয়।সহিহ বুখারি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজও খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা জাদু ক্ষতি করতে পারবেনা। এই খেজুরের উপকারিতা অনেক বেশি।
আনবারা খেজুরঃ এই খেজুর আজুয়া খেজুরের মত ছোট নয়। আনবারা খেজুর আকারে বড় হয়। রং লালচে বাদামি ও পুরু মাংসল এবং বিচি অনেক ছোট। সৌদির বাজারে এই খেজুররও অনেক দাম। তবে এই খেজুরও অনেক পুষ্টিগুণে ভরা।
সাফাওয়ি খেজুরঃ এই খেজুর নরম লম্বাটে। গাঢ় কালচে বাদামী রঙের এই খেজুর খেতে মোটামুটি মিষ্টি। এই খেজুরে রয়েছে উচ্চমাত্রার মিনারেল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে এই খেজুর খেলে পাকস্থলীর জীবাণু ধ্বংস হয়।।
বারহি খেজুরঃ বারহি জাতের খেজুর দেখতে কিছুটা ছোট ও বাদামী হয়। পাকলেও শক্ত ভাব থেকে যায়। রং হয় বাদামী ও হলদেটে। এর হলুদ অংশে টক-ভাব থাকলেও বাদামী অংশে মিষ্টি লাগে। এই খেজুর থোকা ধরে বিক্রি হয়। যারা বেশি মিষ্টি খেতে পছন্দ করেনা তাদের জন্য এই খেজুরটা অনেক ভালো।
সেগাই খেজুরঃ সাধারণত রিয়াদে এই খেজুর বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। কারণ রিয়াদের আশেপাশে এর চাষ বেশি হয়। শুকনো জাতের বাদামী রঙের হয় এই খেজুর। সেগাই খেজুরের দামও অনেক বেশি। শুকনো জাতের এই খেজুর হালকা মিষ্টি হয়। এই খেজুর একটু শক্ত হয় বলে খেতে অনেক সময় কুড়মুড়ে ও ক্রিসপি লাগে।
খেজুরের উপকারিতা
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ খেজুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক ফল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটা অনেক অংশ কমে যায়। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে, খেজুর Abdominal ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং এটি অনেক সময় ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে।
শুকনা বা খোরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
শীতকালে আমাদের শরীর ঠান্ডাতে শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই শীতে ত্বকের এমন অবস্থায় খেজুর খাওয়া খুবই উপকারী। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ক্যালসিয়াম থাকায় শরীরের নানাবিধ সমস্যা দূর করে থাকে। শীতে শরীরে এমন শুষ্ক রক্ষক অবস্থা দূর করতে খুরমা খেজুর খাওয়া খুবই জরুরী। আর এই খেজুর খনিজ ও আয়রন বেশি থাকে।
শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া অনেক বেশি অলসতা আর ঝিমানো ভাব দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধান হিসেবেও আমরা শুকনো খেজুর খেতে পারি। প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শীতে নিয়মিত ড্রাই ফুড বা শুকনো খেজুর খাওয়া যায়। আর এ সময় শুকনো খেজুরি বেশি পাওয়া যায়।
দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
দুধ খেতে অনেকেই ভালোবাসে না। কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ থাকা খুবই জরুরী। কারণ দুধ একটি আদর্শ খাবার যে খাবারে সকল ভিটামিন আছে। তাই দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেলে দুধের স্বাদ অনেকটা পরিবর্তন হয় তাতে করে দুধ খেতে অনেক বেশি মজা হয়। হলে বড় বা বাচ্চারা সকলেই দুধ খেতে পছন্দ করে।
অনেক সময় আমরা অল্প কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অনেক সময় কাজের ব্যস্ততায় আমরা ঠিকভাবে খাবার সময় পাইনা সেই ক্ষেত্রে এক গ্লাস দুধ ও খেজুর মিশিয়ে খেলে শরীরে একটি ভালো পুষ্টির অভাব দূর হবে। অনেকটা সময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে।
আবার অত্যাধিক গরমে অনেক সময় বেশি খাবার খাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে এক গ্লাস দুধের সাথে চার পাঁচটা খেজুর মিশিয়ে খেলে শরীরে যেমন পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হয় আবার পেটও ভরা থাকে। দুধ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস আর খেজুরেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে।
দৃষ্টিশক্তি সচল রাখতে খেজুর ও দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। অনেক সময় চোখে অঞ্জনি হলেও দুধ খেজুর অনেক উপকার করে। যারা একটানা কম্পিউটারে অনেক সময় ধরে কাজ করে তাদের চোখের উপর অনেক চাপ পড়ে। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে দুধ ও খেজুর নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যেতে পারে।
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়
- সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া ভাল।
- দুপুরে খাওয়ার পর খেজুর খাওয়া যায়।
- যখনই মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করবে।
- ওজন বাড়াতে চাইলে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘি দিয়ে খেজুর খেতে হবে।
ভালো খেজুর চেনার উপায়
- ভালো মনের খেজুরের চামড়া সাধারণত একটু ফুচকানো হয়, তবে শক্ত হয় না। আবার উপরের চামড়াও বেশি নরম হয় না, তবে চকচকে উজ্জ্বল হয়। যদি খেজুরের গায়ে দানাদার তেল বা পাউডার জাতীয় কিছু উপস্থিত বোঝা যায় তাহলে বুঝতে হবে সেটা ভেজাল, মানহীন বা নিম্নমানের।
- ভালো খেজুর চেনার আরো একটি কৌশল হলো পিঁপড়া ও মাছের উপস্থিতি। যদি দেখা যায় খেজুরের সামনে মাছি ও পিপড়া ভিড় করছে। তাহলে বুঝতে হবে সেটা ভালো খেজুর না। প্যাকেট করা খেজুর কেনা সব থেকে ভালো। প্যাকেট করা খেজুরের গায়ে মেয়াদ লেখা থাকে। ফলে খেজুর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- খেজুর পচা গন্ধ, পোকা ধরা, কালচে কিংবা বেশি শুকিয়ে গেছে কিনা সেটা বুঝে কিনতে হবে। খেজুর সাধারণত দেড় বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে ফ্রিজে নরমালে রাখলে খেজুর বেশি ভালো থাকে। পোকা ধরার ভয় থাকে না।
- খেজুর কেনার আগে কোন দেশে খেজুর সেটা জেনে নেওয়া জরুরী। খেজুর উৎপাদনের দিক থেকে মিশর বিশ্বে প্রথম। এরপর সৌদি আরবের অবস্থান তৃতীয়। অবস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর উৎপাদনের শীর্ষে আছে পাকিস্তান, আলজেরিয়া ও আফগানিস্তান।
- বিভিন্ন ধরনের খেজুরের মধ্যে আজওয়া, আনবারা,সাগি বা সুগায়ি, সাফাওয়ি, মুসকানি, মরিয়ম খেজুর অন্যতম। তবে আজওয়া খেজুর বেশি ভালো। তাই এই খেজুর কেনা উচিত।
খেজুর সংরক্ষণ পদ্ধতি
সাধারণত তিন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। যেমন, শুকনা খেজুর,আধা শুকনা খেজুর, নরম খেজুর। একেক ধরনের খেজুর একেক রকম ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়।
- পলিব্যাগে খেজুর রাখলে এক সপ্তাহের ভালো থাকবে।
- এক বছর খেজুর সংরক্ষণ করতে চাইলে কন্টেনারে ভরে ফ্রিজে রাখতে হবে। ফ্রিজে রাখার জন্য নরম খেজুর সবচেয়ে ভালো। শক্ত বা শুকনো খেজুর ফ্রিজে না রাখাই ভালো। ফ্রিজে রাখলে আরো বেশি শক্ত হয়ে যায়।
- আধা শুকনা খেজুর ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন চুলা বা আগুনের আশেপাশে না থাকে। সূর্যের আলো পড়ে এমন জায়গায় রাখা যাবে না।
- এছাড়া অনেক দিনের জন্য খেজুর সংরক্ষণ করতে চাইলে প্লাস্টিকের ব্যাগে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তবে পলিব্যাগে রাখার সময় চেপে বাতাস বের করে দিতে হবে। ব্যবহারের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে খেজুর বের করে গরম পানিতে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। তাহলে খেজুরগুলো আগের মতই নরম হয়ে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url