OrdinaryITPostAd

কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

কলা আমাদের কাছে খুবই পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি ফল। কলা খেতে যেমন অনেক সুস্বাদু এবং কলা পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। আর ফলটি আমরা বারোমাসি হাতের নাগালে পেয়ে থাকি। ফলে পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা আমরা সহজে পেতে পারি। এছাড়া কাঁচা কলাতেও প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে।

তবে কলার দুইটি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন পাকা কলা আমরা ফল হিসেবে খাই। আর কাঁচা কলা আমরা সবজি হিসেবে ব্যবহার করি। কিন্তু দুই কলাতেই প্রচুর উপকারিতা আছে। কলার উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টিগুণসহ কলার সকল বিষয় বিস্তারিত জানবো এই পোষ্টের মাধ্যমে।

কলার পুষ্টিগুণ ও উপাদান

কলা বা Banana হল বেরি জাতীয় একটি ফল। এটি দেখতে হলুদ, লাল এবং সবুজ এ তিন রংয়ের হয়ে থাকে। তবে কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং ধারণ করে। এই দুই রঙের কলায় আমরা বেশি দেখতে পাই। কলা মূলত মিউজেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত মিউজা গণের একটি একবীজপত্রী উদ্ভিদের ফল। 

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই কলা প্রধান ফল। সারা বিশ্বব্যাপী কলার পুষ্টিগুণ বহুল পরিচিত। শক্তির অন্যতম উৎস এই কলা ।কারণ কলায় উপস্থিত রয়েছে, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ফাইবার, শর্করা এবং উচ্চমাত্রায় ক্যালোরি। এজন্য ডাক্তার দুধ ও ডিমের পর কলা খাওয়ার পরামর্শ দেয়। কলার জনপ্রিয় তিনটি প্রজাতি হল-

বীজহীন কলা-সাগর কলা, দুধ সর কলা, দুধ সাগর কলা, কগ্নিশ্বর কলা ইত্যাদি।

স্বল্প বীজের কলা-চম্পা কলা, চিনি কলা, জাবকাঠালি কলা, কবরী কলা, চিনি চম্পা কলা ইত্যাদি।

বীজময় কলা-এটে কলা, বতুর কলা, আইটা কলা, গোমা কলা ইত্যাদি।

কাঁচা কলা বা রান্নার কলা-আনাজি কলা, ভেড়ার ভোগ কলা, বর ভাগ্নে কলা, বেহুলা কলা, মন্দিরা কলা, বিয়ের বাতি কলা ইত্যাদি।

কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। কলা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বে কলার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কলা সহজে এবং সারা বছর পাওয়া যাই বলে কলার জনপ্রিয়তা সকলের কাছে। কলার মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা শরীরের রক্তস্বল্পতা ঘাটতি পূরণ করে। কলা খাওয়ার আরোও সব উপকারিতা দেওয়া হল-

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলা আমাদের শরীরে ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কলাতে থাকা ফাইবার মল নরম করতে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে।

এছাড়াও কলাতে রয়েছে পেকটিন নামক ফাইবার, যা পাকাও কাঁচা উভয় কলাতেই পাওয়া যায়। কলাতে থাকা এই পেকটিন কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলাতে থাকা পেকটিন  কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কলাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে কম ক্যালরি ও কলাতে ফ্যাটের কোন সম্ভাবনা নাই। ফলে কলা খেলেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরিপূর্ণ একটি কলাতে রয়েছে ১০০ ক্যালরি। আবার কলাতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় কলা হজম শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে ফলে খাবারের পরিমাণ ও সময় ঠিক থাকে।

হার্ট সুস্থ রাখতেঃ কলা তে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান তা হল ম্যাগনেসিয়াম। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীরের পক্ষে অনেক ক্ষতি হয়। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হৃদরোগের ঝুঁকি, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি ২৭% কমিয়ে দেয়। ফলে কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শরীরে পেশী টান ধরা কমাতেঃ একটানা অনেকক্ষণ কাজ করলে বা এক্সাইজ করার পর আমাদের পেশিতে টান ধরে। এই পেশিতে টান ধরা কারণ হলো শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব। পরিশ্রমের পর কলা খেলে শরীরে তৎক্ষণাৎ ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। ফলে শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয় যা পেশি টান ধরা বন্ধ করতে সাহায্য করে।

খেলোয়াড় বা যারা নিয়মিত এক্সারসাইজ করে তাদের জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কলা থাকতেই হবে। এমনকি কলাতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ থাকে যা আমাদের পেশি গঠন করতে সাহায্য করে। কলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কিডনি ভালো রাখতেঃ কলা একটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। যা শরীরের কিডনি ভালো রাখতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কলা কিডনি সুস্থ  রাখার জন্য বিশেষ উপযোগী একটি খাবার। প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% কমে যাবে।

চোখ ভালো রাখতেঃ কলাতে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, লুটেইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লুটেইন একটি পুষ্টি যা চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলাতে ভিটামিন এ পরিমাণ বেশি থাকায় কলা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ লেকিটিন নামক প্রোটিন কলাতে পাওয়া যায়। যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ  লিউকোমিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। লেকিটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, এই এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। 

যদি আমাদের শরীরে রেডিক্যাল গুলোর পরিমাণ বেড়ে যায় তা আমাদের  কোষকে ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীর সুস্থ রাখতে সকলেরই প্রতিদিন কলা খাওয়া উচিত।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের শরীরের হজম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পারে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে কার্বোহাইড্রেট থাকা সত্ত্বেও ডায়াবেটিস ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ত্বকের যত্নেঃ কলাতে ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে। এই মেঙ্গানিজ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের বলিরেখা দূর করতে পারে। এছাড়া কলাতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। ফলে কলা খেলে ত্বক সুন্দর থাকে।

হাড় শক্ত করতেঃ কলা হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। যদিও কলাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে তবুও কলাতে অন্যান্য উপাদান গুলো হাড়কে শক্ত করে। কলাতে রয়েছে  প্রিবায়োটিক উপাদান যা শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ করে। ফলে হাড় সুস্থ থাকে।

শিশুদের নিয়মিত কলা খাওয়ানোর উপকারিতা 

শিশুদের খাদ্য তালিকা সব সময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। না হলে শিশুর সঠিক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয় না। আর শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য তালিকায় কলা একটি অন্যতম উপাদান। কলা শরীরের সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

 কলাতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ,  ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, বায়োটিন। এছাড়া কলায় ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকে। কলাতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি গ্লুকোজ, সুক্রোজ ,যা শরীরের এনার্জি পেতে সাহায্য করে। এবং শিশুর শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া কলা শিশুর আরোও অনেক উপকার করে। যেমন-
  • শিশুরা সারাদিন খেলাধুলা ছোটা ছুটি করে। ফলে বাচ্চাদের অতিরিক্ত এনার্জির প্রয়োজন হয়। আর প্রতিদিন নিয়মিত শিশুকে কলা খাওয়ালে সেই এনার্জি পূরণ হয়ে যায়।
  • শিশুদের খাওয়ার পরিমাণ যেহেতু অল্প থাকে তাই শিশুদের খাবার হজমে সমস্যা হয়। কিন্তু কলাতে পেকটিন নামক ফাইবারের ফলে শিশুর মলের সমস্যা দূর হয়। এবং কলা খাওয়ালে অনেকটা সময় শিশুর পেট ভরা থাকে।
  • কলাতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি উপাদান থাকে। তাই বাচ্চাদের হাড় গঠনে কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া কলাতে ভিটামিন ও চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা শিশুর শরীরে রক্তস্বল্পতা পূরণে সাহায্য করে। শিশুদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে কলা খুবই প্রয়োজনীয় একটি খাবার। কলা শিশু অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে কলার ভূমিকা অপরিহার্য। শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে কলাকে সুপার ফুড হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কলাতে থাকা পটাশিয়াম শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। এতে শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে। কলা শিশুর মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর পুষ্টিগুণের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কারণ মা ও শিশু দুজনেরই পুষ্টি চাহিদা পূরণে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়।। গর্ভাবস্থায় কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। কারণ কলাতে যে সকল উপাদান থাকে গর্ভাবস্থায় এই উপাদানগুলো মা ও শিশু দুজনকেই সুস্থ রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করবে।


গর্ভাবস্থায় আয়রনের বেশি প্রয়োজন হয়। এ সময় রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে বাচ্চাও মা দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে। তাই কলাতে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে তাই এ সময় কলা খাওয়া খুবই জরুরি। আবার গর্ভাবস্থায় শরীরে পানির চাহিদা পূরণে কলা একটি আদর্শ খাবার।

কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা 

কাঁচা কলাও প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। পাকা কলার উপকারিতা সম্পর্কে সকলেই জানে। কিন্তু কাঁচা কলা তো প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ আছে যা সম্পর্কে অনেকের ধারণা নাই। আসলে কলা গাছের সব অংশেরি অনেক উপকার রয়েছে। কাঁচা কলা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা দেওয়া হল-
  • কাঁচা কলায় এনজাইম থাকে, যা ডায়রিয়া এবং পেটের নানা সংক্রমণ দূর করে। তাই ডায়রিয়া চিকিৎসকরা কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
  • হজমে সমস্যা হলে বা পেট খারাপ হলেও কাঁচা কলা ভালো কাজ করে। কাঁচা কলা সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে বা কলার পাতলা ঝোল রান্না করে খেতে পারলে শরীরের জন্য অনেক ভালো।
  • কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায়, কাঁচা কলা হৃদরোগের জন্য অনেক উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা কলায় হৃদরোগের ঝুকি কম।
  • কাঁচা কলায় অনেক ধরনের উপাদান আছে। ফলে কাঁচা কলা অনেক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। কাঁচা কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি আছে।
  • কাঁচা কলাতেও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেট।

দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা

দুধ একটি আদর্শ খাবার আর কলা তো প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আছে। তাই দুধ এবং কলা মিশিয়ে খেলে এতে অনেক উপকার আছে। অনেকেই দুধ কলা খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাই। কারণ অনেক মানুষ দুধ কলা মিশিয়ে খেতে পছন্দ করে। আবার শিশুদেরও দুধ-কলা মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।

আমরা জানি যে, দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সহ আরও অনেক উপাদান আছে এবং কলাতেও অনেক পুষ্টিগুন আছে। তাই সব মিলিয়ে দুধ ও কলা একটি আদর্শ খাবার হিসেবে তৈরি হয়। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং শরীরে বৃদ্ধি সাধন করে।

তবে আয়ুর্বেদ অনুসারে, দুধ কলা খাওয়ার কিছু অপকারিতাও আছে। যারা নিচে দেওয়া সমস্যায় ভোগে তাদের দুধ ও কলা একসাথে খাওয়া যাবেনা। তবে আলাদা আলাদা সময় করে খেতে পারবে। যেমন-
  • শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা
  • ঠান্ডা লাগা বা কফের প্রভাব
  • হজমে সমস্যা 
  • সাইনাস বা সর্দি কাশির সমস্যা
  • গর্ভবতী মহিলা

পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম

পাকা কলা পুষ্টিগুনে ভরা একটি বারোমাসি ফল। সারা বছরই কমবেশি এই কলা পাওয়া যায়। তাই এই কলা খাওয়ার খেতে কিছু নিয়ম মেনে খেতে হবে। কারণ যাদের শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডা জনিত সমস্যা থাকে তারা সব সময় এই কলা খেতে পারবে না। কলাতে পানি পরিমাণ বেশি থাকে ফলে কলা যে কোন সময় খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে। আবার শীতকালে বেশি কলা খেলে ঠান্ডা লাগে।

কলাতে ফাইবার পটাশিয়ামের পরিমাণও বেশি থাকে। ফলে রাতে কলা খেলে হজমে বা এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যাদের কিডনির সমস্যা থাকে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কলা খাওয়া যায় না। আর গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কলা অনেক পুষ্টিকর একটি ফল কিন্তু পরিমাণ মতো খেতে হবে।

কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় সকালে নাস্তা খাবার সাথে বা নাস্তা খাবার পরে। এ সময় কলা খেলে ঠান্ডা লাগা সম্ভবনা অনেক কম থাকে। কারণ এ সময় সারাদিনের রোদের একটা তাপমাত্রা থাকে। ফলে শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডা লাগা ব্যক্তি এ সময় কলা খেতে পারবে। কলা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এবং খুব সহজে যার উপকারিতা আমরা পেতে পারি। এজন্য একটু নিয়ম করে কলা খেলেই আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে কোন সমস্যাও হবে না।

কলার মোচা খাওয়ার উপকারিতা

বাংলাদেশে বারোমাসি সবজি গুলোর মধ্যে কলার মোচা অন্যতম একটি সবজি। কলাগাছ আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। এবং এই গাছের ফলন সহজেই হয় তেমন কোন যত্নে প্রয়োজন হয় না। শহরে বা গ্রামে প্রায় সব জায়গার মানুষই কলার থোর বা মোচা চিনে থাকি। 

কলার কাঁদির একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা না ফোঁটা ফুলের কুঁড়ির নাম মোচা। মোচার অগ্রভাগ সূচালো। মোচা বাইরে থেকে পরপর খোলার দ্বারা ঢাকা থাকে। এই খোলা টি দেখতে গারো লাল। কলার মোচা রঙিন সবজিতে পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি। এবং এই সবজি সারা বছরই পাওয়া যায়। কলার মোচা দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনই সুস্বাদু।

কলার ১০০ গ্রাম মোচায় রয়েছে, প্রোটিন ১.৭ গ্রাম ,ক্যালসিয়াম্‌,৩২ গ্রাম কার্বোহাইড্র, ৫.১ গ্রা্‌ম, ফসফরাস ৪২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ, ২৭ আই ইউ, লোহা ১.৬ গ্রাম, ০.৭ গ্রাম পটাশিয়াম, ১২৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি, ৪২০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১২৫ মিলিগ্রাম।

কলার মোচায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইডেট ও প্রোটিন থাকায় এটি দেহ গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম  শরীরে হাড়কে মজবুত করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তস্বল্পতা পূরণের জন্য কলার মোচা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কলা ও কলার সকল উপাদানে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কলা খাওয়ার অপকারিতা

কলাতে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে কলার অপকারিত রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে কলা খাওয়ার বিষয়ে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোন জিনিসই বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কোন খাবারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। ফলে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে এবং কিডনি সম্পূর্ণ রূপে কাজ করে না তাদের শরীরে পটাশিয়াম খুবই ক্ষতিকর। তাদের ক্ষেত্রে কলা খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। কারণ কলাতে পটাশিয়াম বেশি থাকে তাহলে কিডনি রক্ত থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম বের করতে অক্ষম হলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই যাদের কিডনির সমস্যা তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ  অনুযায়ী কলা খেতে হবে।

যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে আবার শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা জনিত সমস্যা, ফোলাভাব, চুলকানি ইত্যাদি থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খেতে হবে।

পরিশেষে

কলাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। কলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আবার কলার সবচেয়ে বড় গুণ যে কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা কোন মানুষের শরীরে রক্তের ঘাটতি পূরণে সহজেই ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে বড় কথা যে কলা আমরা সব সময় আমাদের হাতের নাগালে পেয়ে থাকি এবং এটা সব শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

কলা গাছ থেকে সব রকমের পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। যেমন কাঁচা কলা, পাকা কলা, কলার মোচা, কলার থোর সবকিছুই আমরা কোন না কোন ভাবে খেতে পারি। আর কলার সব অংশের মধ্যে কোনো না কোনো পুষ্টিগুনে ভরা থাকে। যা আমাদের শরীরের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে খুব সহজেই।

পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা সহ ও কলার পুষ্টিগুণ সকল বিষয় এই পোস্টের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করলাম। যারা নিয়মিত কলা খেয়ে থাকে বা কলা খেতে অনেক বেশি পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে পোস্টটি অনেক বেশি উপকারে আসবে। কারণ কলার এত উপকারিতা জানার পর কলা খাওয়ার আগ্রহটা আরো অনেক গুন বেড়ে যাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url