আপেল সিডার ভিনেগারের - ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগারের - ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
ভিনেগার বা সিরকা এখন শুধু আচার তৈরির কাজে নয়। আপেল সিডার ভিনেগার অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা অনেক বেশি ও এটা খাওয়ার অনেকগুলো নিয়ম আছে যেগুলো অনুসরণ করে খেতে হবে।
ত্বক ও চুলের যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার বর্তমানে অপরিহার্য একটি অংশ। ত্বক ও চুলের যত্নে এবং ওজন কমাতে সাদা ভিনেগার সিরকা ব্যবহার করা যাবে না। তাই তো চুলের যত্নে এবং ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে হবে। এতে সহনীয় মাত্রায় অম্ল মিশ্রণ থাকে ও শরীরের জন্য কার্যকর বিভিন্ন উপাদান থাকে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করায় উত্তম। আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় সকল বিষয় বিস্তারিত জানব এই পোষ্টের মাধ্যমে।
অ্যাপেল সিডার ভিনাগার কি
আপেল সিডার ভিনেগার একটি আপেলের রস থেকে তৈরি ভিনেগার যা দুইবার গাজানো হয়। আপেল সিডার ভিনেগার কখনো আপেল ভিনেগার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটি প্রাচীন থেরাপিডির পদার্থ গুলোর মধ্যে একটি মেডিসিনের জনক এথিক এস চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। এটি হাজার বছর ধরে তাদের মসল বা একটি ক্ষত বাম এবং সৌন্দর্য উপাদান খাদ্য সংরক্ষণকারী এবং ওজন কমানোর বিষয়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রাচীন গ্রীক রোমান এবং পারসিয়ানরা এটিকে ব্যবহার করত। এটি আমেরিকান গৃহযুদ্ধ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জীবানু এবং ক্ষতগুলোকে ড্রেসিং করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এছাড়াও এটি খাবার সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন খাবারে উপদেয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এটি সাধারণ ভিনেগার বা সিরকার মত না। এটি আপেলের রস থেকে তৈরি যা আপেল কে দুইবার গাঁজানো পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। এই দ্বিগুণ গাজন আপেলের রসের প্রাকৃতিক শর্করাকে প্রথমে অ্যালকোহলে এবং তারপরে এসিটিক এসিডে ভেঙে দেয়।
এসিটিক অ্যাসিড ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগারে ভিটামিন, খনিজ, সাইট্রিক এসিড, ম্যালিক এসিড, অ্যামিনো এসিড, দ্রবণীয় ফাইবার, লাইভ এনজাইম এবং পলিফেনল রয়েছে। এটিতে যেমন লাইভ ইস্ট ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক, এটিতে প্রোবায়োটিক গুণাবলী আছে।
আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা
সাদা ভিনেগারের তুলনায় আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা অনেক বেশি। সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক কাজে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। যেমন, হেঁচকি নিরাময় থেকে শুরু করে ঠান্ডা জনিত সকল সমস্যা দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
পেটের সমস্যা নিরাময়ঃ অনেক সময় পেটের ব্যথা বা গ্যাস্টিকের ব্যথা অনেক বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে একটু আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পানি পান করলে পেটের ব্যথা নিমেষে চলে যাবে। আবার ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন জনিত ডায়রিয়া তে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার।
এতে কিছু এন্টিবায়োটিক গুন আছে যা শরীররে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার রয়েছে পেকটিন যা বাস্তবিক অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে। সরাসরি জুস হিসেবে বা দুই থেকে তিন টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে পান করা যায়।
হেঁচকি থেকে মুক্তি পেতেঃ হেঁচকি দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে তাহলে নিমিষেই হেঁচকি উঠা বন্ধ হয়ে যাবে। অতিরিক্ত উত্তেজিত স্নায়ু হেঁচকি উঠার জন্য দায়ী।
গলা ব্যথা দূর করতেঃ অনেক সময় গলা ব্যথা বা গলায় খুসখুস করলে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে গলায় ব্যথা বা খুসখুস করা আরাম হয়ে যায়। কারণ আপেল সিডার ভিনেগার ছড়িয়ে যাওয়া ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ অ্যাসিড যুক্ত পরিবেশে জীবাণু টিকে থাকতে পারে না। ১/৪ কাপ কাপ কুসুম গরম পানিতে১/৪ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে এক ঘন্টা পর পর কুলকুচা করলে গলায় উপশম পাওয়া যাবে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেঃ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপেল সিডার কোলেস্টরেল কমায়। ২০০৬ সালে জার্মানের এক গবেষণায় দেখা যায়, ভিনেগার এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরো দেখা যায়, আধা আউন্স আপেল সিডার ভিনেগার সেবনে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
বদহজম দূর করতেঃ যে ধরনের খাবারগুলো খেলে শরীরে হজম করতে সমস্যা হয় বা পেটে বাধহজমের সৃষ্টি করে সে ধরনের খাবার খাওয়ার আগে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করলে বদহজম দূর হয়। এটা প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত একটি পদ্ধতি যা মানুষের শরীরে খুবই ভাল কাজ করে।
বন্ধ নাক পরিষ্কারেঃ আমাদের যখন সর্দি লাগে তখন নাক বন্ধ হয়ে যায় ছোট বড় সবারই এই সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। আর এটা অনেক কষ্টকর একটি বিষয় যখন নাক বন্ধ হয়ে যায় নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয় বাচ্চারা কান্নাকাটি করে।
এমন ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী হিসাবে কাজ করে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা মিউকাসকে পাতলা করতে সাহায্য করে এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিড জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে নাক বন্ধ হওয়া সমস্যা দূর করে। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করলে সাইনাস জনিত সমস্যা নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করে।
চুলের যত্নেঃ চুলে শ্যাম্পু করার পর আপেল সিডার ভিনেগার দিলে চুলে কন্ডিশনিং এর কাজ করে। চুলে খুশকি থাকলে দূর হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। একটি স্প্রে বোতলে বা অন্য কোন বোতলে তিন চামচ ভিনেগার এর সাথে এক কাপ পানি মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর চুলে স্প্রে করতে হবে। তাতে চুলে কন্ডিশনিং হবে এবং চুল স্বাস্থ্যে উজ্জ্বল হবে।
ত্বকের যত্নেঃ আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের টনিক হিসাবে কাজ করে। অল্প পরিমাণ নিয়ে পানির সাথে বা গোলাপ জলে মিশিয়ে ত্বকে যেখানে ব্রণ সৃষ্টি হয়েছে সেই স্থানে নিয়মিত লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই ব্রণ চলে যাবে।
পেডিকিউর বা মেনিকিউর করতে কুসুম গরম পানিতে কিছু পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। এছাড়াও সান ট্যান রিমুভ করতে অলিভ অয়েল বা পানির সাথে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে স্কিনে এপ্লাই করলেই সান ট্যান দূর হয়ে যাবে।
রাতে পায়ের পেশিতে টান দূরঃ অনেকের প্রায়ই রাতে পায়ের পেশিতে টান ধরে। শরীরে পটাশিয়ামের অভাবে এই সমস্যা দেখা দেয়। আর আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই এক গ্লাস প্রথম গরম পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ব্যাকটেরিয়া নিধন করতেঃ শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঝে মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা যায়। এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। কিছুটা আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সংক্রামক স্থানে ভালোভাবে পরিষ্কার করলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর হয়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ নিয়মিত ব্রাশ ও মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করার পরও মুখে দুর্গন্ধ যায় না। সে ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যবহার এই সমস্যা দূর করতে পারে। এক চা চামচ ভিনেগার কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে নিয়মিত কুলকুচা করলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করতেঃ আপেল সিডার ভিনেগার দাঁতের জন্য সাধারণত ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। আপেল সিডার ভিনেগার দাঁত সাদা এবং দাঁতের রং ভালো করে এবং দাঁতে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের চেয়ে ভালো কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না।
কালশিটে ভাব দূর করতেঃ আপেল সিডার ভিনেগার রয়েছে আন্টি ইনফ্লামাটারি উপাদান। কালশিটে দাগের উপর আপেল সিডার ভিনেগার প্রলেপ দিলে আস্তে আস্তে কালশিটে দাগ তুলতে সাহায্য করে। এক কাপ আপেল সিডার ভিনেগার গোসলের ১০ মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে নিতে হবে। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। তাছাড়া গোসলের পানিতে দিয়েও ব্যবহার করা যায়। এতে মন প্রফুল্ল হবে রোদে পোড়া দাগও কমবে।
হৃদ রোগের ঝুকি কমায়ঃ বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর বড় একটি কারণ হৃদরোগ। রক্তের কোলেস্টের এর পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আপেল সিডার ভিনেগার রক্তের কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে সঠিকভাবে আপেল সিডার ভিনেগার এর মাধ্যমেও শরীরকে সুস্থ রাখা যায়।
দেহে pH এর সমতা রক্ষা করেঃ আপেল সিডার ভিনেগার pH এর সমতা রক্ষা করে, শক্তি বাড়ায়, ক্লান্তি দূর করে, ব্যাথা দূর করে, ওয়াক আউট করার সময় শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য স্ট্যামিনাকে উন্নত করে।
খুশকি দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার
অ্যাকজিমায় আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা
সাবান, শ্যাম্পু সহ বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহারে পিএইচ এর স্তরগুলো উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। এমন কি ট্যাপের পানিতে ত্বকের অম্লতা হ্রাস পায়। এসব কারণে অ্যাকজিমা মারাত্মক লক্ষ্য প্রকাশ করে। কিন্তু আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের পিএইচ স্তর কে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ত্বকে অ্যাকজিমা ভালো করতে আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা অনস্বীকার্য।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অপরিশোধিত আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে হজমে সমস্যা হয় এবং পরবর্তীতে আলসারের সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেকে খাবার খাওয়ার পরে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে গিয়ে বমি করে বা বদহজমের শিকার হয় তাই অবশ্যই খাওয়ার অন্তত আধা ঘন্টা আগে এটা খেতে হবে।
ঘরোয়া উপায়ে আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি
যেভাবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না।
- বেশি পরিমাণে আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়া যাবে না।
- ত্বকে সরাসরি ব্যবহার না করে, পানি মিশিয়ে তুলা দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
- ব্যবহার করার সময় দাঁতে সরাসরি না লাগিয়ে, স্ট্রো ব্যবহার করতে হবে।
- দিনে ১৫ লিটার বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
- হজম জনিত সমস্যা, পটাশিয়াম কমে যাওয়া ও ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url