OrdinaryITPostAd

তীব্র গরমে ঘামাচি থেকে রক্ষা পাওয়ার ১৬ টি ঘরোয়া উপায়

 তীব্র গরমে ঘামাচি থেকে রক্ষা পাওয়ার ১৬ টি ঘরোয়া উপায়

তীব্র গরমে ঘামাচি খুবই বড় একটি সমস্যা। এবং শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সমস্যার কারন। কিন্তু বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় আমরা ঘামাচি প্রতিরোধ করতে পারি। আজকে তীব্র গরমে ঘামাচি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সহ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করব।

তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ সেখানে গরমের প্রতাপ এ শরীরে ঘামাচির প্রকোপ বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াই। শিশুদের ক্ষেত্রে এবং বড়রাও এই সমস্যায় ভোগে। কিন্তু বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারি।

ঘামাচি কি

ঘামাচি এক প্রকারের চর্মরোগ। অতিরিক্ত গরমে ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ির মত বের হয় সেটাকেই আমরা ঘামাচি বলে থাকি বা হিট র‍্যাশ বলি। সাধারণত অতিরিক্ত ঘাম থেকেই ঘামাচির সৃষ্টি হয়। এবং ঘাম থেকেই ঘামাচি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। আর এগুলো ফুসকুড়ির মত হয়ে যখন চুলকায় তাকে আমরা ঘামাচি বলি। গরমে ত্বকে ঘামাচি হলে এটা শরীরে খুবই অস্বস্তি তৈরি করে। তবে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় আমরা আমারা ঘামাচি প্রতিরোধ করতে পারি।

ঘামাচি হওয়ার কারণ

ত্বকের ঘর্মগ্রন্থীর সাথে এক ধরনের জীবাণু থাকে। এই জীবাণুর নাম স্টেফ এপিডারমাইডিস। অতিরিক্ত গরমে স্বাভাবিকভাবে ঘর্মগ্রন্থী থেকে ঘাম মিশ্রিত হয়। আর ঘামের সাথে ধুলাবালিও জমে। ফলে ত্বকে ঘাম ও জমে থাকা ধুলোবালি একসাথে মিশে ত্বক থেকে ঘাম নিঃসৃত হতে পারেনা। তখন স্টেফ এপিডারমাইডিস এর সংস্পর্শে এসে ঘামাচি উৎপন্ন হয়।

ঘামাচির প্রকারভেদ

ঘামাচি সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো নিচে দেওয়া হল-

মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনাঃ এই  ধরনের ঘামাচি স্বাভাবিক হয়ে থাকে। এর এমন কোন উপসর্গ দেখা যায় না। ত্বকের অ্যাপি ডার্মিস থেকে এই ঘামাচি হয়ে থাকে। তবে স্বাভাবিক ঘরোয়া উপায় এই ঘামাচি প্রতিরোধ করা যায়।

মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডাঃ এই ধরনের ঘামাচি দেখতে অনেকটা মিলিয়ারিয়া ঘামাচির মতোই হয়ে থাকে। এটির ও তেমন কোন ক্ষতিকর উপসর্গ থাকে না মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা স্বাভাবিক ঘামাচির মতই হয়ে থাকে। মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা ত্বকের এপিডারমিস থেকে হয়।

মিলিয়ারিয়া রুব্রাঃ মিলিয়ারিয়া রুব্রা মূলত যন্ত্রণাদায়ক ধামাচে। যখন তকে অতিরিক্ত ধূলা-মাইলা জমে এবং ঘর্মগ্রন্থী বন্ধ হয়ে যায় মিলিয়ারিয়া রুব্রা ঘামাচি বের হয়। ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ি ও পানি ফোটার মত হয় এই ঘামাচি। এই ঘামাচি হলে ত্বকে চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার সমস্যা অনেক বেশি হয়। এবং ত্বকের গভীর থেকে এই ঘামাচি বের হয়। তবে ঘরোয়া উপায় এই ঘামাচি ভালো না হলে ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।

ঘামাচি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

তীব্র গরমে ঘামাচি একটি বড় সমস্যা। ঘামাচির ফলে শরীরে জ্বালাপোড়া সহ অস্বস্তি তৈরি হয়। তবে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায়ে ঘামাচি সমস্যার সমাধান করা যায়। ঘরোয়া উপায়ে ঘামাচি সমস্যার সমাধান নিচে দেওয়া হল-

বরফঃ ঘামাচির সমস্যা বরফ খুবই উপকারী একটি উপাদান এবং খুব সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। ঘামাচি স্থানে বরফ দিয়ে ঘষলে ঘামাচি দূর হয়। আবার ঠান্ডা পানি দিলেও ঘামাচিতে আরাম পাওয়া যায়।

মুলতানি মাটিঃ মুলতানি মাটির তৈরি পেস্ট ঘামাচির জন্য অনেক উপকারী। এই পেস্ট তৈরি করার জন্য চার টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, গোলাপ জল ও পরিমাণমতো পানি নিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এবং ঘামাচির জায়গায় এই পেস্ট লাগিয়ে দুই তিন ঘন্টা রেখে দিয়ে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে খামাচি ভালো হয়ে যাবে

বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা ঘামাচির জন্য বেশ উপকারী। ঘামাচির জন্য বেকিং সোডা ব্যবহারের নিয়ম হলো এক কাপ ঠান্ডা পানিতে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড় বেকিং সোডা মেশানো পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে নিতে হবে। তারপর ঘামাচির স্থানে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

চন্দনঃ চন্দনের গুড়া গোলাপ জলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচির স্থানে কয়েকবার লাগাতে হবে। তাহলে দেখা যাবে কিছুদিনের মধ্যে ঘামাচি ভালো হয়ে গেছে। চন্দন ঘামাচির জ্বালাপোড়া ও চুলকানি ভালো করতে সাহায্য করে।

এলোভেরা জেলঃ এলোভেরা জেল ঘামাচির জন্য অনেক বেশি আরামদায়ক কাজ করে। কয়েক দিন ত্বকে এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে ঘামাচি দূর হয়ে যায়। তাই এলোভেরা পাতা থেকে এলোভেরা জেল বের করে তোকে দেখে নিতে হবে। তারপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

লেবুর রসঃ লেবুর রসে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা দূর করতে সাহায্য করে। ঘামাচি দূর করতে প্রতিদিন তিন থেকে চার গ্লাস পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।

ফিটকিরিঃ ঘামাচিতে ফিটকিরি মিশ্রিত পানি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গোসল করলে ঘামাচি থেকে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া পানি পরিশোধন ও আফটার সেভিং এ ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়।

লাউঃ লাউ একটি ঠান্ডা জাতীয় সবজি। লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তাই ঘামাচির জন্য লাউ ঝলসে নিয়ে তা থেকে রস বের করে কিছুদিন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

বেসনঃ ঘামাচি ভালো করতে বেসন খুবই কার্যকরী উপাদান। বেসনের সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর ঘামাচির উপরে লাগিয়ে পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে ঘামাচি থেকে অনেক আরাম পাওয়া যাবে।

আলুঃ আলু শুধু রূপচর্চায় ব্যবহার করা হয় তা না। ঘামাচি দূর করতেও আলু খুবই উপকারী। কাঁচা আলু পেস্ট তৈরি করে ঘামাচিতে লাগালে ঘামাচি ভালো হয়ে যায়।

ওটমিলঃ ঘামাচির জন্য ওটমিল বাথ খুবই উপকারী। বাথটাবে আধকাপ ওটমিল ভিজিয়ে তারপর ১৫-২০ মিনিট বাথটাবে ডুবে থেকে গোসল করলে ঘামাচি দূর হয়। আবার ওটমিল ভেজানো পানি ঘামাচির উপর লাগালেও ঘামাচির অসহ্য চুলকানি থেকে আরাম পাওয়া যায়।
তরমুজঃ তরমুজ খাওয়ার সময় রেখে দিয়ে পরে ওই তরমুজ ঘামাচির উপরে লাগালে ঘামাচি দূর হয়ে যায়। এবং ঘামাচি থেকে অনেক আরাম পাওয়া যায়।

আদাঃ আদার পানি ঘামাচির জন্য অনেক উপকারী। তাই আদা গ্রেট করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পানি ঠান্ডা করে নরম সুতি কাপড় দিয়ে ঘামাচির জায়গায় লাগালে ঘামাচি ভালো হয়।

শসাঃ ঘামাচির চুলকানি দূর করতে শসা খুবই আরামদায়ক। ঘামাচির চুলকালে দূর করতে শসা কার্যকরী। শসা পাতলা করে কেটে ঘামাচির উপর ৩০ মিনিট রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও শসা রস করে লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে পাতলা পরিস্কার কাপড় দিয়ে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।

কাঁচা আমঃ গ্রীস্মের অতিরিক্ত গরমে ঘরে ঘরে কাঁচা আম থাকে। তাই ঘামাচি নিরাময়ে কাঁচা আমের  জুস খুবই ভালো। প্রথমে দুইটি আম গরম পানিতে সিদ্ধ করে রস বের করে নিতে হবে। তারপর আমের রসের সাথে পরিমাণ মতো লবণ ও চিনি মিশিয়ে জুস বানিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে ঘামাচি চুলকানি ও জ্বালা যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

ঘামাচি দূর করতে ঘরোয়া ফেসপ্যাক

গরমে ঘামাচির সমস্যা একটি বড় সমস্যা। অনেকের মুখেও অনেক ঘামাচি বের হয়। ফলে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে মুখে ঘামাচি দূর করতে ঘরোয়া একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে লাগালে ঘামাচি দূর হবে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ফেসপ্যাক তৈরিতে যা যা লাগবে-
  • এক চামচ তুলসিপাতা পেস্ট
  • এক চামচ লাউ পেস্ট 
  • এক চামচ আতপ চালের গুড়া
সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে তাহলে মুখে ঘামাচি দূর হবে এবং মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

শিশুদের ঘামাচি থেকে রক্ষা করার ঘরোয়া উপায়

গরমে শিশুদের ঘামাচি একটি বড় সমস্যা। কারণ ঘামাচির অসহ্য চুলকানি ও জ্বালাপোড়া শিশুরা কোনভাবেই সহ্য করতে পারেনা। ফলে তারা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে থাকে। তাই শিশুদের ঘামাচি থেকে রক্ষা করার ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হল-

  • শিশুকে প্রচন্ড গরম থেকে দূরে রাখতে হবে। যুক্ত বা ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।
  • ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরাতে হবে। আবার ফ্যানের বাতাসে খালি গায়ে রাখতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত গরমে শিশুকে ডায়পার পড়ানো যাবে না।
  • শিশুর ঘাড়, বাহুমুল, ও ভাজ ভয় এমন অংশে ঘাম জমে তাই এসব স্থানে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে বা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
  • প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করাতে হবে।

ঘামাচি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার

ত্বকের যেকোন সমস্যার সমাধানে নিমপাতা খুবই উপকারী। এবং ঘামাচি দূর করতে নিন পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান কার্যকরী ভূমিকা আছে। তাই নিম পাতা পেস্ট শরীরে লাগিয়ে ভালো করে শুকাতে হবে। এভাবে দিনে ৪-৫ বার ব্যবহার করতে পারলে ঘামাচি দূর হয়ে যাবে।

এছাড়াও নিমপাতার আরও একটি ব্যবহার আছে। যা ঘামাচি দূর করতে সাহায্য করে। যেমন, একমুঠ নিমপাতা দুই কাপ পানিতে ভালো করে বিশ মিনিট ধরে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর সেই পানি ঠান্ডা করে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘামাচির জায়গায় পাঁচ থেকে দশ মিনিট ধরে লাগাতে হবে। এভাবে চার পাঁচ বার করতে পারলে ঘামাচি দূর হয়ে যাবে।

পরিশেষে

তীব্র গরমে ঘামাচি সমস্যা অধিকাংশ মানুষের হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঘাম থেকে এবং ত্বকে ধুলাবালি জমে ঘামাচি সমস্যা তৈরি হয়। শরীরে ঘামাচি হলে অত্যাধিক চুলকায় এবং জ্বালাপোড়ার কি হয় অনেক সময় অসহ্য চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অতিষ্ঠ করে তুলে।

তাই তীব্র গরমে ঘামাচি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টের  মাধ্যমে। নিয়মিত বিভিন্ন তথ্যমূলক আরো পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url