OrdinaryITPostAd

দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ৮ টি উপায় জেনে নিন

 দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ৮ টি উপায় জেনে নিন

রান্নার কাজে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার সঠিক ব্যবহার না জানার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায় বিস্তারিত দেওয়া হলো এই আর্টিকেলে।

গ্যাস যেকোনো দেশের জন্যই একটি বড় সম্পদ। তাই এটি ব্যবহারে আমাদের সকলেরই সতর্ক হওয়া উচিত। যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সাবধান থাকতে হবে। এবং অতিরিক্ত গ্যাস অপচয় করা যাবে না। অকারনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা উচিত নয়।

দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায়

দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার উপায় জানা খুবই জরুরী। একটু অসতর্কতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায় নিচে দেওয়া হলো-

রান্নার পর চুলা বন্ধ রাখাঃ রান্নার পর অবশ্যই গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখলে একে তো গ্যাসের অপচয় হয় অন্যদিকে ঘরে গ্যাস চালিয়ে রাখলে যদি রান্না ঘরে জানালা বন্ধ থাকে তাহলে সারা ঘরে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গ্যাস সিলিন্ডারে লিক চেক করাঃ গ্যাস সিলিন্ডারের লিক থেকেই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। তাই সিলিন্ডার লিক হচ্ছে কিনা মাঝে মাঝে চেক করে দেখতে হবে। আর চেক করার জন্য পানিতে সাবানের গুড়া মিশিয়ে ফেনা তৈরি করতে হবে। এবার ফেনা হস পাইপ, রেগুলেটর, ভাল্ব ইত্যাদিতে লাগাতে হবে। যদি দেখা যায় সাবান পানির ফোটা বড় হচ্ছে। তাহলে বুঝতে হবে গ্যাস লিক হচ্ছে। এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সিলিন্ডার ঠান্ডা স্থানে রাখাঃ সিলিন্ডার উচ্চচাপ ও তাপ জায়গায় রাখা যাবে না। রান্না তুলে দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না। এতে করে খাবারে আগুন ধরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে। রান্না করার সময় কাপড় সাবধানে রাখতে হবে। কারণ কাপড়ে আগুন লেগেও বিস্ফোরণ হতে পারে। 

রাতে চুলা বন্ধ রাখাঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই চেক করে দেখতে হবে যে গ্যাসের চুলা বন্ধ করা হয়েছে কিনা। এবং নিয়মিত এই অভ্যাসটা করলে দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ হওয়া যায়।

রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখাঃ রান্না করার আগে এবং পরে জানালা খোলা রাখতে হবে। জানালা বন্ধ রাখলে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রান্নাঘরের দরজা জানালা খোলা রাখতে হবে।

গ্যাসের গন্ধ খেয়াল করাঃ সিলিন্ডারের গ্যাসে খুব বাজে গন্ধ হয়। লিক হলে খুব বাজে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমন গন্ধ পেলে আগুন জালানো যাবে না বাসার বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করতে হবে প্রয়োজনে সুইচ বন্ধ করতে হবে। মোমবাতি বা কোন প্রকার আগুন জ্বালানো যাবে না। ঘরের দরজা জানালা খুলে  বাতাস যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সিলিন্ডার হলে রেগুলেটর বন্ধ রাখতে হবে। এবং সেফটিক্যাপ লাগাতে হবে।

চুলা থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখাঃ চুলে থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখতে হবে। চুলার কাছাকাছি সিলিন্ডার বা বিস্ফোরক জাতীয় কোন কিছু রাখা যাবে না। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাখতে হবে

সিলিন্ডারে গ্যাস কতটুকু আছে জানার সহজ উপায়

রান্নার সময় সিলিন্ডারে গ্যাস কতটুকু আছে এই নিয়ে সবসময়ই একটা চিন্তা কাজ করে। এই বুঝি গ্যাস ফুরিয়ে গেল। গ্যাস সিলিন্ডারে কতটুকু গ্যাস আছে তা জানার উপায় নিচে দেওয়া হল-
  • একটা ভেজা কাপড় দিয়ে এলপিজি সিলিন্ডার টিকে খুব ভালো করে মুছে নিতে হবে খেয়াল রাখতে হবে সিলিন্ডারের গায়ে যেন ধুলোর আস্তরণ জমে না থাকে।
  • সিলিন্ডার ভালো করে মুছা হয়ে গেলে ২-৩ মিনিট পরে দেখা যাবে সিলিন্ডারের কিছুটা অংশ শুকিয়ে গেছে আর বাকি অংশ ভিজে রয়েছে।
  • সিলিন্ডারের যে অংশ শুকাতে বেশি সময় লাগছে। বুঝতে হবে সে অংশটুকু পর্যন্ত গ্যাস রয়েছে। আর যে অংশটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেছে সিলিন্ডারের সেই অংশটি খালি কারণ সিলিন্ডারে যে অংশ তরল রয়েছে সেখানকার তাপমাত্রা খালি জায়গা তুলনায় কিছুটা হলেও কম তাই সিলিন্ডারে যে অংশ গ্যাস রয়েছে সেই অংশটির তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম বলে শুকোতে বেশি সময় লাগে।

মেয়াদ থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার

গ্যাস সিলিন্ডার কেনার সময় সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কিনা সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সহকারে দেখা প্রয়োজন। কারণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা এর সঙ্গে জড়িত। গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত প্রতি ১০ বছরে পুনরায় নতুন ব্যবহার করা উচিত।
অন্যান্য তথ্য লেখার সঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ ও সিলিন্ডারের বডিতে লেখা থাকে। প্রস্তুতির তারিখ থেকে দশ বছর পার হয়ে গেলে সিলিন্ডারের গুণগতমান কমতে থাকে। হলে আবার গ্যাসের জন্য সেটা ব্যবহার করা উচিত নয়।

রান্নার সময় করনীয় কাজগুলো

রান্না শুরু করার কমপক্ষে আধাঘন্টা আগে দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে। রান্নাঘর যথেষ্ট বড় থাকতে হবে যাতে সিলিন্ডার দূরে স্থানে রাখা যায়। রান্নাঘর নানা ধরনের জিনিস পত্র থেকে ফাকা রাখতে হবে। রান্না শেষে অবশ্যই রেগুলেটর বন্ধ করতে হবে।

গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার কতদিন পর্যন্ত ঘরে রাখা যায়

গ্যাস সিলিন্ডার দীর্ঘ সময় বাড়িতে রাখা যায়। এর মেয়াদ আজীবন। তবে মাঝে মাঝে এর কোয়ালিটি চেক করে দেখতে হবে ঠিক আছে কিনা। প্রতিটি খালি গ্যাস সিলিন্ডার দশ বছর পরপর পূর্ণ ব্যবহৃত করা হয়। গ্যাস সিলিন্ডারে মরিচা বা জং ধরার সম্ভাবনা থাকে।

গ্যাস কম ফুরিয়ে রান্না করার উপায়

গ্যাস আমাদের দেশে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আর এ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদেরই দায়িত্ব। তাই গ্যাস কম ফুরিয়ে রান্না করার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল-


বেশি করে রান্না করাঃ একবারে একটু বেশি করে রান্না করলে। বারবার রান্না করার ঝামেলা থাকে না এবং গ্যাসও কম ফুরাই। এভাবে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে।

প্রেসার কুকারে রান্না করাঃ প্রেসার কুকারে রান্না করলে রান্না অনেক তাড়াতাড়ি হয়। এবং তাড়াতাড়ি রান্না হলে গ্যাস কম ফুরার। আবার সময়ও অনেক কম লাগে। অল্প সময়ে অনেক কিছু রান্না করা যায়।

ভালো বার্নার ব্যবহার করাঃ ভালো বার্নার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্যাসের খরচ কম হয়। আবার বার্নার সব সময় যে প্যানে রান্না করা হয় তার থেকে ছোট নিতে হবে তাহলে রান্নার প্যান সহজেই গরম হবে।

বার্নার পরিষ্কার করাঃ রান্না করতে করতে বার্নারে অনেক ময়লা ও কালি জমে থাকে। ফলে চুলাই তাপ উঠতে সময় লাগে। এজন্য নিয়মিত বার্নার পরিষ্কার করতে হবে। 

বার্নার তাড়াতাড়ি বন্ধ করাঃ রান্না শেষ করে বার্নার তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলে গ্যাস কম ফুরাবে। বারবার চুলা জ্বালালেও গ্যাস বেশি ফুরায়।

ঢাকনা দিয়ে রান্না করাঃ রান্না করার সময় ঢাকনা দিয়ে রান্না করলে তাড়াতাড়ি রান্না সিদ্ধ হয়ে যায় এবং ভালো হবে রান্না হয়। অল্প পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে রান্না করতে হবে।

প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করাঃ রান্নাঘরে দরজা জানালা খুলে রান্না করলে পর্যাপ্ত আলো বাতাস রান্নাঘরে প্রবেশ করে। ফলে দুর্ঘটনা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে আবার প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।

পরিশেষে

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুলো সঠিকভাবে পালন করলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এবং পরিবারের সকলকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। গ্যাস সিলিন্ডার কোথায় থেকে বা কার কাছ থেকে কেনা হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রান্নার স্থান উপযুক্ত আলো বাতাস পূর্ণ হতে হবে। যাতে রান্না ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত বিভিন্ন তথ্যমূলক পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url