ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস নিরাময়ের উপায় - জন্ডিস নিরাময়ে আখের রসের উপকারিতা
ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস নিরাময়ের উপায় - জন্ডিস নিরাময়ে আখের রসের উপকারিতা
ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস নিরাময়ের বিষয়ে অনেকেই জানতে চায়। কারণ জন্ডিস ওষুধ সেবনের থেকে ঘরোয়া চিকিৎসায় ভালো হয়। তাই ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস নিরাময়ের উপায় এবং জন্ডিস নিরাময়ে আখের রসের উপকারিতাসহ আরোও বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোষ্টের মাধ্যমে।
জন্ডিস লিভারের একটি মারাত্মক অসুখ। জন্ডিস হলে লিভার তার কর্ম ক্ষমতা
হারিয়ে ফেলে। ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা একজন মানুষকে অসুস্থ করে
তোলে। এবং জন্ডিসের খাবার শক্তি হারিয়ে যায় ফলে রোগী দ্রুত অসুস্থ
হয়ে যায়।
জন্ডিস কি
জন্ডিস হওয়ার কারণ
- বিভিন্ন বাইরের জনিত আক্রমণের ফলে জন্ডিস হতে পারে। যেমন হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদক সেবনের ফলে জন্ডিস হয়।
- অটোইমিউন ডিসঅর্ডার বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করলে।
- বিরল জেনেটিক রোগের মাধ্যমে।
- কিছু ওষুধের কারণে জন্ডিস হয়। যেমনঃ এসিটামিনফেন, পেনিসিলিন, অরাল কন্ট্রাসেপটিভ, ইস্টজেনিক বা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ইত্যাদি।
- পিত্তথলিতে পাথর হলে।
- অগ্ন্যাশয়ে টিউমার হলে।
- লিভার সিরোসিস রোগ হলে।
- হিমলাইটিক অ্যানিমিয়া রোগ হলে।
জন্ডিসের লক্ষণ
- শরীরের ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া ও চেহারা দেখতে ফ্যাকাশে লাগা। এই উপসর্গ গুলো জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
- প্রসবের সময় অতিরিক্ত বিলুরুবিন যাওয়ার ফলে প্রসবের রং গারো হলুদ বা কমলা রঙের মতো হয়ে যায়।
- জন্ডিস হলে শরীর খুব ক্লান্ত লাগে। কাজ করা শক্তি থাকে না।
- জন্ডিস হলে পেটে ব্যথা হয়। তবে তলপেটে ব্যথা শুরু হয়। তলপেটে ব্যথা জন্ডিস রোগীর খুবই মারাত্মক লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে।
- জন্ডিস হলে খাবারে কোন রুচি থাকে না। ক্ষুধা মন্দা দেখা যায় হলে পিত্তরস উৎপাদন কমে যায় এবং খাবার হজম করতে পারে না। ফলে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায়।
- জন্ডিসের কারণে খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটায় বমি হয়। লিভার সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় বমি হয়।
- শরীরে জ্বর আসা জন্ডিসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে শরীর ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত জ্বর আসে।
- অনেক সময় জন্ডিস হলে শরীরে চুলকানি হয়। এটি জন্ডিসের অন্যতম লক্ষণ।
- জন্ডিসে পিত্তথলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। হলে পিত্ত রস তৈরি করতে পারে না বলে ক্ষুদা মন্দা দেখা দেয়।
- মলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। কারণ জন্ডিস হলে লিভার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না হলে বিলিরুবিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। তাই এ সময় মলের রং ফ্যাকাশে হয়।
জন্ডিস হলে যা যা করতে হবে
- বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
- জন্ডিস হলে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।
- প্রচুর তরল পানীয় পান করতে হবে
- নরম ও পাতলা জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
- বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে কারণ পানির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ ও ই ছড়ায়।
- জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে বাইরের খাবার খাওয়া যাবেনা।
- অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে।
- শরীরে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
- নিয়মিত চিকিৎসকের চেকআপে থাকতে হবে।
- নিয়মিত বিলুরুবিন লিরুবি পরীক্ষা করতে হবে।
ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিসের চিকিৎসা
জন্ডিস ঘরোয়া চিকিৎসাতে বেশি ভালো হয়। জন্ডিসের ওষুধ কম খাওয়ায় ভালো।। সেই ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো বৈজ্ঞানিক সম্মত হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জন্ডিসের চিকিৎসায় ঘরোয়া উপায় গুলো দেওয়া হল-
আখের রসঃ দিনে কয়েকবার আখের রস খেতে হবে। এটি আমরা দেশের বেশ সহজলভ্য একটি খাবার। এবং জন্ডিসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী একটি খাবার। তবে বাড়িতে আখের রস বানিয়ে খাওয়া ভালো।
টমেটো রসঃ শীতকালে টমেটো আমাদের দেশে খুবই সহজে পাওয়া যায়। টমেটো রসে
প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন থাকায়। এটি রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
ঘোলঃ জন্ডিস রোগীর জন্য ঘোল খুবই উপকারী একটি পানীয়। ঘোলের
সাথে সামান্য পরিমাণ গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে বেশি ভালো কাজ করে।
পেপে পাতাঃ পেপে পাতায় পাপাইন নামক এনজাইম থাকায় এটি জন্ডিস রোগীদের
জন্য খুবই উপকারী। পেপে পাতা ভালো করে ধুয়ে ছেচে নিতে হবে। তারপর মধু মিশিয়ে
পেস্ট করে খেতে হবে।
কালোজিরাঃ কালোজিরা এমন একটি উপাদান যাকে সর্ব রোগের ওষুধ বলা হয়ে থাকে।
কালোজিরায় থাকা উপাদান জন্ডিস নিরাময় সাহায্য করে।
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা চা জন্ডি স রোগীর জন্য খুবই উপকারী। প্রাচীনকাল থেকেই
জন্ডিস নিরাময় পুদিনা চা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পুদিনা পাতার রস মধু
দিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
মুলার জুসঃ মূলা এবং মুলার পাতার জুস জন্ডিসের জন্য খুবই
উপকারী।মুলা এবং মুলার পাতা ভালো করে ছেচে রস বের করে খেলে জন্ডিস রোগ ভালো
হয়ে যায়। এছাড়াও মূলা ও মুলার পাতা রস পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে
ছাগলের দুধঃ ছাগলের দুধ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি প্রধান আছে।। ছাগলের দুধে
থাকা অ্যান্টিবডি জন্ডিস নিরাময়ে সাহায্য করে। এক কাপ ছাগলের দুধ
জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
লেবুর শরবতঃ লেবুর রসে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা লিভার কে
সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন তিন থেকে চার গ্লাস লেবুর শরবতের সাথে মধু
মিশিয়ে খেলে জন্ডিস অনেকটা ভালো হয়ে যায়।
দইঃ প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই রক্তে বিলিরুবিন কমিয়ে আনতে সাহায্য
করে। প্রতিদিন অল্প করে জন্ডিস রোগের জন্য ওষুধের মত কাজ করে।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস নিরাময়ে আখের রসের উপকারিতা
জন্ডিসে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে
- রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- লিভার বা যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- পেট ফুলে যেতে পারে।
- পেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- মস্তিষ্ক বিকল্প হয়ে যেতে পারে।
- জ্বর ও বমি হতে পারে।
- ঘাড়ের পিছনে ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
- হাঁটাচলা করতে কষ্টকর হয়ে পড়ে।
- খুব জোরে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে।
নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ডিসের হার
পরিশেষে
নবজাতকের জন্মের পর প্রতিদিন সূর্য ওঠার সময় যে রোদ হয় সেটা বাচ্চার গায়ে ধরলে আস্তে আস্তে জন্ডিসের সেই প্রকোপটা সেরে যায়। বিভিন্ন তথ্য মূলক পোস্ট পেত www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url