সুপার ফুড কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁঠাল খেলে কি রোগ সারে
সুপার ফুড কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁঠাল খেলে কি রোগ সারে
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠাল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাই সুপার ফুড এই কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাঁঠাল খেলে কি রোগ সারে সকল বিষয় বিস্তারিত জানবো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
কাঁঠাল গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। কাঁঠাল খেতে সকলেই পছন্দ করে। এবং খুব সহজেই হাতের নাগালে কাঁঠাল পাওয়া যায়। গ্রাম অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কাঁঠালের গাছ দেখা যায়। কাঁঠাল, কাঁঠালের বিচি, কাঁঠালের পাতা সবকিছু খুবই উপকারী।
কাঁঠালের বৈশিষ্ট্য ও পুষ্টিগুণ
কাঁঠাল আকারে অনেক বড় হয়। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এই ফলটি দেখতে অন্যান্য ফলের থেকে একটু আলাদা হয়। এই ফলটি কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতে খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল দক্ষিণ এশিয়ার এবং পূর্ব এশিয়া খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। যা রান্না করে খেতে হয়।
কাঁঠালের বাইরের অংশ অনেক পুরু এবং বাইরের অংশ গায়ে কাটার মত। এই ফলে ভেতরের অংশ লম্বা কান্ড থাকে এবং এই কান্ডকে ঘিরে পুরো অংশ তৈরি হয়। এবং এই কান্ডকে ঘিরে অসংখ্য কুয়া থাকে এই কুয়াগুলোকে কোষ বলা হয়ে থাকে।
কাঁঠাল গাছ দেখতে সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিটার অথবা ৩০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং এই গাছের কাঠ দিয়ে অনেক সুন্দর ও দামি আসবাবপত্র তৈরি হয়।এছাড়া কাঁঠাল গাছের পাতা বিভিন্ন প্রাণীর প্রিয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। কাঁঠাল অত্যন্ত উপকারী একটি ফল এবং এর পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের পুষ্টি উপাদান-
- খাদ্য শক্তি-৩৯৭ কিলো ক্যালরি
- খাদ্য আঁশ-২.০০ গ্রাম
- চিনি-১৯.০৮ গ্রাম
- স্নেহ-০.৬৪ গ্রাম
- প্রোটিন-১.৭২ গ্রাম
- ভিটামিন এ-৫ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটা ক্যারোটিন-৬১ মাইক্রোগ্রাম
- লুটিন জিয়াক্রানথিন-১৫৭ মাইক্রোগ্রাম
- থায়ামিন-০.১০৫ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাবিন-০৫৫ মিলিগ্রাম
- নায়াসিন-০.৯২ মিলিগ্রাম
- প্যানটোথেনিক এসিড-০.২৩৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৬-০.৩২৯ মিলিগ্রাম
- ফোলেট বি৯-২৪ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন সি-১.৩৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই-০.৩৪ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম-২৪ মিলিগ্রাম
- লোহ-০২৩ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম-২৯ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ-০.০৪৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস-২১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম -৪৪৮ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম -২ মিলিগ্রাম
- জিংক-০.১৩ মিলিগ্রাম ও অন্যান্য
কাঁঠালের উপকারিতা
কাঁঠাল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। কাঁঠালে পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি থাকায় কাঠাল খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কাঁঠাল সহজলভ্য হওয়ায় সবাই কাঁঠাল খেতে পারে। কাঁঠালের উপকারিতা আরো দেওয়া হলো-
- কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। তাই কাঁঠাল খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- কাঁঠালে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কাঁঠাল খুবই উপকারী একটি ফল। কাঁঠাল খেলে পেট পরিষ্কার থাকে।
- আলসারের সমস্যা দূর করতে কাঁঠাল প্রাকৃতিক উপায়ে ওষুধের কাজ করে। কাঁঠালের মধ্যে থাকা এক ধরনের উপাদান আলসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- কাঁঠালের মধ্যে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কাঁঠালের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাঁঠালে থাকা পটাশিয়াম হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ত্বক ভালো থাকে ও ত্বককে রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালে ফাইবারে পরিমাণ বেশি থাকায় কাঁঠাল খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। ফলে খিদে কম লাগে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
- কাঁঠালে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ক্ষতিকারক ফ্রিরেডিকেল থেকে দেহকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আর গঠনে সাহায্য করে। এবং হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কাঁঠালে আয়রন এবং খনিজ উপাদান বেশি থাকায় এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে।
- হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের শিকড় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাঁঠাল গাছের শেকর সিদ্ধ করে খেলে হাঁপানি রোগের উপশম করে।
- চর্ম রোগের ক্ষেত্রেও কাঁঠাল গাছের শিকড় খুবই উপকারী।
বিভিন্ন রোগ সারাতে কাঁঠালের ঔষধি গুনাগুন
বিভিন্ন রোগ সারাতে কাঁঠালের অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। কাঁঠাল খেলে অনেক রোগের প্রতিকার হয়। এবং কাঁঠাল গাছের শেকড় থেকেও অনেক রোগ দূর হয়। কাঁঠাল যে সকল রোগ সারাতে সাহায্য করে তা নিচে দেওয়া হল-
- হাঁপানি রোগ নিরাময় কাঁঠালের ব্যবহৃত হয়। হাঁপানি সমস্যায় কাঁঠালের শেকর সিদ্ধ করে খেলে হাঁপানি রোগের অনেক উপশম হয়।
- কাঁঠালের শিকড় চর্মরোগ সারাতে সাহায্য করে।
- জ্বর নিরাময়ের ক্ষেত্রে কাঁঠালের শিকড় ব্যবহার করা হয়।
- ডায়রিয়ার সমস্যা প্রতিরোধে কাঁঠালের শিকড় খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
রান্নায় কাঁচা কাঁঠালের ব্যবহার
কাঁঠাল শুধু হিসেবেই নয় কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে তরকারি হিসেবে রান্না করে খেতে খুবই সুস্বাদু একটি সবজি। কাঁঠাল রান্না করতে প্রথমে অবশ্যই কাঁঠালের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর কাঁঠালের ভেতরে অংশ গুলো কেটে নিতে হবে।
কাঁঠালের ভেতরের রুয়া বা কোষগুলো ভালো করে কেটে নিতে হবে। তারপর তরকারির মত করে রান্না করতে হবে। এছাড়াও অনেকে অন্যান্য সবজির সাথে রান্না করে খেতে বেশি পছন্দ করে। কাঁঠালের তরকারি ভাত বা রুটির সাথে খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। কাঁঠালের তরকারি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।
গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠাল খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। যাকে সুপার ফুড হিসেবেও বলা হয়ে থাকে। এই কারণে গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়া খুবই উপকার। কারণ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয় আর সেই অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে কাঁঠাল খুবই উপকারী। গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা হল-
- কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকায়। কাঁঠাল গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে খুবই কার্যকরী। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খুবই পরিমিত এবং নিয়ম করে খেতে হবে।
- কাঁঠালে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খেলে রক্তস্বল্পতা পূরণে ভূমিকা রাখে।
- কাঁঠালে ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়াম থাকায় গর্ভাবস্থায় বাচ্চা হাড় গঠনে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- কাঁঠাল গর্ভাবস্থার পরেও দুগ্ধদান কালেও খুবই উপকারী। এ সময় কাঁঠাল খেলে বাচ্চা দুধের পরিমাণ বেড়ে যায়।
কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠাল এমন একটি ফল যার প্রতিটা অংশই খুবই উপকারী। কাঁঠালের বিচি খেতে অনেক স্বাদ লাগে। কাঁঠালের বিচি নানাভাবে খাওয়া যায়। কাঁঠালের মত কাঁঠালের বিচিও অনেক পুষ্টিগুনে ভরপুর। কাঁঠালের বিচির উপকারিতা দেওয়া হলো-
- কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে যা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রোটিন থাকায় কাঁঠালের বিচি মাংস পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- কাঁঠালের বিচিতে ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট থাকার কারনে এটি ওজন বৃদ্ধি না করে শরীরকে এনার্জি দিতে পারে।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রোটিন থাকায় আমিষের চাহিদা সহজে মেটাতে পারে। সাধারণত যারা মাছ-মাংস বেশি খায় না তাদের ক্ষেত্রে এই খাবারটি আমিষের চাহিদা পূরণ করে।
- এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং ত্বকের বলে দেখা দূর করতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালের বিচি খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুলের আগা ফাটা সমস্যা রোধ করে চুল পড়া বন্ধ করে।
- কাঁঠালের বিচিতে থাকা কপার থাইরয়েড গ্রন্থি ভালো রাখে।
- কাঁঠালের বিচিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সাহায্য করে।
- কাঁঠালের বিচিতে থাকা আন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কাঁঠাল কাঁচা এবং পাকা সব অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তরকারি হিসেবে যেমন কাঁচা কাঁঠাল খাওয়া যায়। আবার কাঁঠালের বিচিও রান্না করে খাওয়া যায় বা ভেজে খাওয়া যায়। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে কাঁঠাল খাওয়ার কিছু নিয়ম দেওয়া হল-
- কাঁঠালে প্রচুর পরিমানে আঠা থাকে। এজন্য কাঁঠাল পাকা বা কাচা যেটাই হোক কাটার সময় হাতে তেল মেখে নিতে হবে।
- খালি পেটে কাঁঠাল খেলে বদহজম হতে পারে তাই কাঁঠাল সকালে নাস্তার পর বা দুপুরে খাবার আগে এ সময়গুলোতে হালকা খাবার খেলে তেমন একটা সমস্যা হয় না। এজন্য এই সময়গুলোতে কাঁঠাল খাওয়া ভালো।
- দুপুরে এবং রাতে খাবার খাওয়ার পর কাঁঠাল খেতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত খাবারের যে পরিমাণ তার থেকে কম খাবার খেতে হবে এবং সেই পরিমাণ কাঁঠাল খেতে হবে।
- কাঁঠালের জুস করে খাওয়া যায়।
- কাঁঠাল অবশ্যই সঠিক সময় খাওয়া উচিত এবং পরিমাণের চেয়ে কখনো বেশি খাওয়া উচিত নয়।
কাঁঠাল খাওয়ার পর যে ফলগুলো খাওয়া ক্ষতিকর
কাঁঠালের অপকারিতা
- কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কাঁঠাল খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে খাবার পরে যদি সমস্যা না হয় তাহলে বুঝতে হবে কাঁঠাল খেলে এলার্জির সমস্যা হবে না।
- অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠাল খেলে এসিডিটি সমস্যা হতে পারে।
- যাদের রক্ত সংক্রামক সমস্যা আছে। তাদের কাঁঠাল খাওয়া উচিত না।
- কাঁঠাল শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কাঁঠাল খুবই কম পরিমানে খেতে হবে এবং বেশি কাঁঠাল খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- যেকোনো ধরনের অস্ত্র পাচারে অন্তত দুই সপ্তাহ কাঁঠাল খাওয়া যাবে না।
- যেকোনো ওষুধ এবং কাঁঠাল একসাথে খাওয়া যাবে না। তাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url