কুলেখাড়া পাতার রসের উপকারিতা - কুলেখাড়া পাতার পুষ্টিগুণ
কুলেখাড়া পাতার রসের উপকারিতা - কুলেখাড়া পাতার পুষ্টিগুণ
কুলেখাড়া পাতার কথা অনেকেই জানে। কিন্তু এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
অনেকেই জানে না। ফলে হাতের কাছে থেকেও আমরা এর ব্যবহার করিনা। তাই আজকে এই
আর্টিকেলের মাধ্যমে কুলেখাড়া পাতার রসের উপকারিতা ও কুলেখাড়া
পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
কুলেখাড়া হল একটি ভেষজ ঔষধি গাছ। গ্রাম অঞ্চলে কুলেখাড়া সাল হিসেবে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে। কুলেখাড়া পাতার প্রধান উপকারিতা শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কুলেখাড়া পাতার পুষ্টি উপাদান
কুলেখাড়া পাতা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ একটি ভেষজ ঔষধি গাছ। কুলেখাড়া পাতা
রস শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহায়তা করে থাকে। এবং বিভিন্ন রোগের
নিরাময় করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কুলেখাড়া পাতার পুষ্টি উপাদান
দেওয়া হলো-
- খাদ্য শক্তি
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- ফাইবার
- ফ্যাট
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- সোডিয়াম
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- রিবোফ্লাভিন
- ফলিক অ্যাসিড
- কপার
- বিটা ক্যারোটিন
প্রতি ১০০ গ্রাম কুলেখাড়া পাতার পুষ্টি উপাদান
- খাদ্য শক্তি-৫৮.৮০ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন - ৪.৬৯ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট - ১২.২ গ্রাম
- ফাইবার - ১.৮০ গ্রাম
- ফ্যাট - ০.১৩ গ্রাম
- পটাশিয়াম - ২৬৬ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ২৭.৯৩ মিলিগ্রাম
- আয়রন - ৭.০৩ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম - ৫৬.১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি - ৫০.০৮ মিলিগ্রাম
কুলেখাড়া পাতার বৈশিষ্ট্য
কুলেখাড়া পাতার ইংরেজি নাম Swamp Weed। এবং
কুলেখাড়া পাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল Hygrophila Auriculata। কুলেখাড়া
পাতার বৈশিষ্ট্য দেওয়া হল-
- কুলেখাড়া গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে বেশি জন্মায়। এবং গ্রাম অঞ্চলে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
- আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করতে কুলেখাড়ার মূল, ফুল, পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়।
- কুলেখাড়া পাতার রস রক্ত শূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এটি কুলেখাড়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- কুলেখাড়ার শাক আমাদের শরীরে নানা রকম উপকার করে থাকে।
কুলেখাড়া পাতার রসের উপকারিতা
কুলেখাড়া পাতা রসের উপকারিতা অনেকেই সঠিক ভাবে জানে না। এর যে ঔষধি গুণ সেটা
খুবই সহজে ব্যবহার করে উপকারিতা লাভ করা যায়। কুলেখাড়া খুবই পরিচিত একটি ভেষজ
উদ্ভিদ। যা কাজে লাগিয়ে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। কুলেখাড়া পাতার রসের
উপকারিতা দেওয়া হল-
লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করতেঃ কুলেখাড়া পাতার রস আমাদের
শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এর
মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা আমাদের শরীরে অ্যানিমিয়া অর্থাৎ
রক্তস্বল্পতা পূরণে সাহায্য করে। মহিলাদের ক্ষেত্রে কুলেখাড়া পাতার রস খুবই
উপকারী একটি ভেষজ ঔষধ।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতেঃ কুলেখাড়ায় ফাইবার থাকায় এটি হজম
শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কুলেখাড়ায় প্রতিদিন নিয়মিত
খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
রক্ত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতেঃ কুলেখাড়ার পাতার
রস হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। বাচ্চা ও মহিলা দের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া বা
রক্ত স্বল্পতার সমস্যা বেশি দেখা যায়। রক্তস্বল্পতা পূরণে কুলেখাড়ার রসের
উপকারিতা অনেক বেশি। কারো রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে টানা এক সপ্তাহ কুলেখাড়া
পাতার রস নিয়মিত এক গ্লাস খেলেই তার রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়ে যাবে।
হাড় মজবুত করতেঃ কুলেখাড়া শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম। যা শরীর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে
হাড়ের ক্ষয় ধরে তাই নিয়মিত কুলেখাড়ার শাক খেলে হাড়ের ক্ষয়
রোধ করে এবং হাড় গঠনে সহায়তা করে।
ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়েঃ কুলেখাড়া শাক ডায়রিয়া ও আমাশয়
নিরাময় সাহায্য করে।
পাকস্থলী ও লিভারের সুরক্ষায়ঃ কুলেখাড়া পাকস্থলী ও লিভার সুরক্ষায়
কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নিয়মিত কুলেখাড়া খেলে শরীরে বিভিন্ন অংশ সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ কুলেখাড়া পাতা বা রস সব
অংশই কোন না কোন কাজে ব্যবহৃত হয়। কুলেখাড়ার সকল উপাদানে শরীরে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কৃমি দূর করতেঃ কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার ফলে কৃমি দূর
হয়। কারণ কুলেখাড়া পাতার মধ্যে রয়েছে Antihelminthic বৈশিষ্ট্য। যা কৃমি
দূর করতে সাহায্য করে।
গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেঃ কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার
ফলে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে শুরু করে। তাই ডায়াবেটিসের মাত্র নিয়ন্ত্রণ
রাখতে নিয়মিত কুলেখাড়া পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রক্তপাত বন্ধ করতেঃ কোথাও কেটে গেলে রক্ত বের হলে দ্রুত
কুলেখাড়া পাতা থেতো করে ক্ষতস্থানে চেপে ধরলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে
যাবে। এবং দ্রুত ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে।
শরীরের ফোলাভাব কমাতেঃ কোন কারনে শরীর ফুলে গেলে দ্রুত কুলেখাড়া
পাতার রস দিনে দুইবার এক চামচ করে খেতে হবে। এবং কুলেখাড়া পাতার
রস মধু দিয়ে মিশিয়ে খেলে আরো বেশি দ্রুত ফোলা ভাব কমে যাবে।
অনিদ্রা দূর করতেঃ যদি ঘুম না আসার সমস্যা থাকে তাহলে কুলেখাড়া পাতার রস
ঘুম না আসার সমস্যা সমাধান দিবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কুলাখাড়া পাতার রস
নিয়মিত খেলে কিছুদিনের মধ্যে ঘুম না আসা সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পিত্তথলিতে পাথর হলেঃ পিত্তথলিতে বা মুত্রাশায় পাথর হলে
কুলেখাড়া বীজের গুড়া 2 চামচ ২৫০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে। প্রসাবে সময়
ব্যথা বা জ্বালাপোড়া কমে যায়। এবং পিত্তথলিতে ব্যথা উপশম হয়। এবং
পাথরের ফলে ব্যথা অনেকটা কমে যায়
কুলেখাড়া পাতার ব্যবহার
- কুলেখাড়ার খারাপ পাতাগুলো বেছে পরিষ্কার পাতা নিতে হবে।
- পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারলে বেশি ভালো।
- কুলেখাড়ার শাক ছোট ছোট করে কেটে অল্প সামান্য পানি দিয়ে পিষে নিতে হবে।
- তারপর রস গুলো ছেঁকে নিতে হবে।
- তারপর এক কাপ পানিতে এক চামচ কুলেখাড়ার রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রত্যেকদিন পান করতে হবে।
- কুলেখাড়া পাতা শাক হিসাবে ও খাওয়া যায়।
কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
কুলেখাড়ার পাতা ভালো করে ধুয়ে রস করে নিতে হবে। তারপর রসগুলো ভালো করে থেকে
নিতে হবে। তারপর পানির সাথে মিশিয়ে এক চামচ মধু দিয়ে নিয়মিত খেতে হবে। এই
রসের উপকারিতা অনেক। বিভিন্ন ভাবে এর উপকারিতা পাওয়া যায়। এর পাতা ও কাণ্ডের রস
উভয়ই খাওয়া যায়।
আবার অনেকে কুলেখাড়ার পাতার শাক ও রান্না করে খাওয়া যায়। পাতা বা কান্ডের
রস অনেক তিতা হয়। তাই তিতার কারণে অনেকে খেতে পারে না। তাই সরাসরি খেতে
সমস্যা হলে কুলেখাড়ার টনিক, কুলেখাড়া পাউডার,
কুলেখাড়া ট্যাবলেট খাওয়া যায়। তবে এগুলো ঘরোয়া উপায়ে খাওয়া বেশি ভালো।
কুলেখাড়া বীজ চেনার উপায়
অনেকে কুলেখাড়া বীজ বলতে তালমাখনা বীজ মনে করে কিনে ফেলে। কিন্তু আসল
কুলেখাড়া বীজ বলতো বাজারে যেটা কুলেখাড়া বীজ বলে বিক্রি করে আসলে সেটা
কুলেখাড়া না। বাজারে যেটা কুলেখাড়া বীজ বলে সেটা কোকিলাক্ষ
ব্রীজ ওইটা আসল কুলেখাড়া বীজ না। আসল কুলেখাড়া বীজের রং অবিকল
কোকিলের চোখের রঙের মতো।
কুলেখাড়া সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সবকিছুই ভালো এবং মন্দ দি ক থাকে। কুলেখাড়া পাতার ক্ষেত্রেও তাই। কুলেখাড়া
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক বেশি থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এই মেসেজ ও উদ্ভিদের বেশি কোন সমস্যা বা
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। তবে কিছু বিষয়ে খেয়াল করে খাওয়া উচিত।
যেমন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালে বা গর্ভাবস্থায় কুলেখাড়ার কথা খাওয়া
ঠিক না। তবে বিশেষ কোনো কারণে খেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
কুলেখাড়ার পাতা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। কিন্তু
গর্ভাবস্থায় এটা হওয়া নিরাপদ না।
যাদেরব ক্রনিক এলার্জির সমস্যা থাকে তাদের এটা না খাওয়াই ভালো।
এবং যারা হাইপারসেন্সিটিভ তাদের ক্ষেত্রে এই পাতা খাওয়া উচিত না।
অতিরিক্ত পরিমাণে এই পাতা বা কান্ডের রস খাওয়া উচিত না। অতিরিক্ত কোন কিছুই
ভালো ফল দেয় না। তাই এগুলো পরিমাণ মতো খেতে হবে। অতিরিক্ত
মাত্রায় কুলখাড়া খাওয়ার ফলে বদহজম, পাতলা পায়খানা, বা
ডায়রিয়া হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাস ও অম্বল হতে পারে।
পরিশেষে
কুলেখাড়া পাতার পুষ্টিগুণ, উপাদান এবং উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন।
কুলেখাড়া পাতার পুষ্টিগুণ উপকারিতা এত বেশি যে অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে এর
ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া কুলেখাড়া পাতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রক্তে হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কুলে খাড়া বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কুলেখাড়া পাতার বিভিন্ন পুষ্টিগুণ উপাদান ও সকল বিষয় জানানোর চেষ্টা করলাম এই
পোস্টের মাধ্যমে। আশা করি, যারা এ বিষয়ে এতটা ধারণা ছিল না তাদের
এই পোষ্টের মাধ্যমে কুলেখাড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ভালো ধারণা
পেয়ে যাবে। নিয়মিত বিভিন্ন তথ্য মূলক পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url