ওষুধ সেবনে পিত্তথলির পাথর দূর করা কি সম্ভব বিস্তারিত জানুন
ওষুধ সেবনে পিত্তথলির পাথর দূর করা কি সম্ভব বিস্তারিত জানুন
ওষুধ সেবনে পিত্তথলির পাথর দূর করা কখনোই সম্ভব না। অনেকেই মনে করেন যে ওষুধ খেলে পাথর দূর হয়ে যাবে। তাহলে ওষুধ সেবনে পিত্তথলির পাথর দূর করা সম্ভব কিনা পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সহ সকল বিষয় বিস্তারিত জানা যাবে এই পোস্টের মাধ্যমে।
পিত্ত থলিতে পাথর হওয়া একটি পরিচিত সমস্যা। পুরুষের তুলনায় নারীদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অনিয়মিত খাদ্যাভাস, দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা এ রোগের প্রধান কারণ। আরো বিভিন্ন কারণে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।
পিত্তথলির পাথর কি
পিত্তথলির পাথর ছোট ছোট বালুর দালার মত হয়ে থাকে। আবার মোটরের দানার মত বড় বা এর থেকেও বড় হয়ে থাকে। এটি বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। তবে পাথরটি কোন পদার্থ থেকে তৈরি হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করে রংয়ের পরিবর্তন হয়।
কোলেস্টেরল, বিলুরুবিন ও ক্যালসিয়ামের সমন্বয়ে গঠিত হয় এই পাথরগুলো এবং পিত্তরসের সাথে মিশে থাকে। হালকা বাদামি, ময়লাটে, কালো কুচকুচে বা সাদা রঙের হয়ে থাকে। পেটের ডান দিকে যকৃতের পেছনে ও নিচের দিকে এটি থাকে। পিত্ত রস তৈরি করে পিত্তথলির কাজ। খাবার হজম করা, বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজম করা পিত্তথলির কাজ। বিভিন্ন উপাদান গিয়ে জমা হয়ে পিত্তথলির পাথর সৃষ্টি হয়।
পিত্তথলির পাথর হওয়া কারণ
আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিভিন্ন জটিল রোগের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে পিত্তথলির পাথর হয়ে থাকে। পিত্তথলি পাথর হওয়ার কারণ নিচে দেওয়া হল-
- আমরা বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার কারণে অনেক সময় ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করি না। কিন্তু এই অনেকটা সময় খালি পেটে থাকার কারণে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।
- শরীরে ওজন বেড়ে গেলে পিত্তথলির ওপর চাপ পড়ে। এর ফলেও পিত্তথলিতে পাথর হয়।
- চল্লিশ বছরের পর মনপোলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। তাই ৪০ বছর পর এ সময় পানি এবং অন্যান্য খাবারের বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে।
- ডায়াবেটিস থাকলেও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এ রোগের রোগীদের পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বংশের কারো এ রোগ থাকলেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ
পিত্তথলিতে পাথর হলে অনেক সময় লক্ষণ সহজে বোঝা যায় না। অনেকের অনেক দেরিতে বোঝা যায়। তবে দ্রুত বোঝা না গেলে পরবর্তীতে জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ সমূহ নিচে দেওয়া হল-
- পিত্তথলির র পাথর হলে মাছ মাংস ও অধিক মসলা ও তেল জাতীয় খাবার খেলে পেট ফুলে যায় এবং বমিও হতে পারে।
- কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং প্রচন্ড পেটে ব্যথা হয়।
- পেটে ব্যথা বিভিন্ন কারণেও হয়ে থাকে যেমন আলসার, হৃদ রোগের বিভিন্ন উপসর্গ ইত্যাদি । তাই পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারা জানতে হবে।
- অনেকের পিত্তথলি থেকে পাথর বেরোতে গিয়ে পিত্তথলিতে আটকে যায়। তখন বিলিরুবিনের বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জন্ডিসের সৃষ্টি হয়।
- পিত্তথলিতে পাথর হলে অনেক সময় হেপাটাইটিস ও আক্রান্ত হয়। তাই দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- পিত্তথলির পাথর হলে মূল লক্ষণ হিসেবে অনেক সময় পেটের ডান দিক থেকে ব্যথা শুরু হয় এবং দান কাঁধ পর্যন্ত ব্যথা হয়। এরকম হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হবে।
পিত্তথলি পাথরের চিকিৎসা
পিত্তথলির পাথর ওষুধ সেবনে দূর করা যায় না। এর জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হয়। অপারেশনের মাধ্যমে পাথর অপসারণ করতে হয়। পিত্তথলির পাথরের প্রধান চিকিৎসা হল অপারেশন। আর এই অপারেশন দুই ভাবে করা যায়। যেমন-
- সরাসরি পেট কেটে
- লেপারোস্কপিক মেশিনের সাহায্যে
আধুনিক চিকিৎসা জগতে লেপারোস্কপিক পদ্ধতি খুবই সুবিধা জনক। লেপারোস্কপির অর্থ হলো ক্যামেরা দিয়ে দেখা। পেটের যে অংশে পিত্তথলি অবস্থিত সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে সূক্ষ্ম সরূ যন্ত্র দিয়ে বের করা। এতে অপারেশন করার সময় ব্যথা ও রক্তক্ষরণ কম হয়। এবং রোগী দুই-একদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে।
পিত্তথলির পাথর নিশ্চিত হওয়ার পর তা অপারেশন করে নেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় ঔষধ খাওয়ার পর ব্যথা কমে যায় এবং সমস্যা থাকে না। হলে অপারেশন না করে অনেকেই মনে করে ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে অপারেশন না করে পরবর্তীতে অনেক বড় বিপদ হতে পারে।
পরে এ রোগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে অনেকদিন পাথর নিয়ে থাকলে শরীরে জন্ডিস বা অগ্নাশয় প্রদাহ সৃষ্টি হবে এমনকি পিত্তথলিতে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। তাই পিত্তথলি পাথর কে অবহেলা না করে দ্রুত অপারেশন করা উচিত।
পিত্তথলির অপারেশনের পর কতদিন লাগে স্বাভাবিক হতে
অপারেশনের পর কিছুদিন লাগে ব্যথা সারতে। তবে হালকা ব্যাথা থাকলেও ব্যথার ওষুধ খেলে সেটা ছেড়ে যায়। তবে অপারেশনের তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যথা ঠিক হয়ে যায়। অপারেশনের কিছুদিন পর নিজেকে সুস্থ বা স্বাভাবিক মনে হলে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করা যাবে।
অপারেশনের পর শরীর কিছুটা দুর্বল থাকে। ফলে শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই ক্লান্তি দূর করার জন্য খেতে হবে এবং দিনে ২-৩ বার ভালো করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ পর দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করা যাবে। তবে অন্তত দুই সপ্তাহ ভারী কোন কিছু তোলা বা করা যাবে না।
পিত্তথলির অপারেশনের পর কি কি খাবার খাওয়া যাবে
পিত্তথলি বাদ দেওয়ার পর খাবারে তেমন কোনো বাধা নিষেধ থাকে না। সব ধরনের খাবারই স্বাভাবিকভাবে খাওয়া যায়। তবে খিদে বা খাবার চাহিদা ফিরে আসতে কয়েক দিন সময় লাগে। যখনই খিদে লাগে একটু একটু করে খেয়ে খিদে বাড়ানো চেষ্টা করতে হবে।
এ সময় চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া ভালো। শাকসবজি এবং তাজা ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। আর অপারেশন রোগীর জন্য তাজা ফল শাকসবজি খাওয়া জরুরী। এ সময় ফাইবার ক্যালসিয়াম সহ সকল উপাদান প্রয়োজন হয়। এবং অপারেশনের পর মলত্যাগ স্বাভাবিক হতে ২-৩ দিন লেগে যায়।
পিত্তথলির অপারেশনে লেপারোস্কপির উপকারিতা
যেকোনো সার্জারিতে যদি থাকে কিন্তু লেপারোস্কপিক সার্জারিতে ঝুঁকি অনেক কম থাকে। রোগী কে খুবই সামান্য সমস্যায় ভুগতে হয়। রোগী খুবই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। এবং অপারেশনে রক্তক্ষরণ কম হয় বলে। রোগী কম দুর্বল বোধ করে।
তবে বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা অপারেশন করাতে হবে। বিশেষজ্ঞ সার্জন না হলে চিকিৎসা বা লেপারোস্কপিক অপারেশনে কোন ভুল হয়ে গেলে বা কোথাও কেটে ছিঁড়ে গেলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে। তাই অপারেশন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক দ্বারা অপারেশন করতে হবে।
পরিশেষে
অনেকেই মনে করে ওষুধ খেলে পিত্তথলের পাথার দূর হয়ে যাবে। কিন্তু না অপারেশন ছাড়া পিত্তথলের পাথার দূর হয় না। আর পিত্তথলের পাথার হলে বা হওয়ার আগে লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসা নিতে দেরি করা বা অবহেলা করা যাবে না।
শরীরে যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। পিত্তথলির পাথর হওয়ার কারণ লক্ষণ সহ অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল এই আর্টিকেলে মাধ্যমে। বিভিন্ন তথ্য মূলক আরো পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url