OrdinaryITPostAd

তীব্র গরমে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

 তীব্র গরমে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

এলার্জি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। একেকজনের শরীরে একেক রকম এলার্জি দেখা যায়। তাই তীব্র গরমে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত দেওয়া হল এই পোস্টে। 

শরীরে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি হয়ে থাকি। এলার্জি পুরোপুরি ভাবে কখনো দূর করা যায় না। সচেতন ভাবে চলাফেরা মাধ্যমে ভালো থাকা যায়। এলার্জি বিভিন্নভাবে শরীরে ক্ষতি করে থাকে। তবে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

এলার্জি কি

চুলকানি হল এলার্জি লক্ষণ। যা অ্যালার্জেন্স ঘটিত একটি সমস্যা। কোন একটি বিশেষ উপাদান শরীরে সহ্য করতে না পারার প্রতিক্রিয়ায় হল এলার্জি। অ্যালার্জিতে তারাই বেশি আক্রান্ত হয় যাদের রক্তে ইওসিনোফিলের পরিমাণ বেশি থাকে। বেশিরভাগ সময় এলার্জির ক্ষেত্রে চুলকানি টা একটি বড় লক্ষণ কারণ শরীরে অ্যালার্জেন্সের প্রতিক্রিয়া বা বহিঃপ্রকাশ হল ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ যেটা চুলকানি রূপে প্রকাশ পায়। এই চুলকানি শরীরে কোন স্থানে হতে পারে।

এলার্জির লক্ষণসমূহ

শরীরে এলার্জির উপাদান শরীরে প্রবেশ করা খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এলার্জি লক্ষণসমূহ হলো-

  • চামড়ায় চুলকানি, র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া।
  • শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফলে যাওয়া। আবার অনেক সময় ফোসকা পড়া বা চামড়া ঝরে যাওয়ার মতো হয়।

  • ঠোঁট, জিব্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া।
  • চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া ও লাল হয়ে ফুলে যাওয়া।
  • শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও ও নাক বন্ধ হওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা, শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হওয়া।
  • বমি হওয়া, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া

এলার্জি হওয়ার কারণ

আমরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু তার মধ্যে অনেক খাবার আমাদের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। খাবার ছাড়াও বিভিন্ন জিনিসে এলার্জি প্রতিক্রিয়া  দেখা দিতে পারে। তাই এলার্জি হওয়ার বিভিন্ন কারণ নিচে দেওয়া হল-

সাধারণত যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এলার্জি দেখা দেয় তা হল-

  • ধুলোবালি
  • গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া
  • ঘাম
  • গৃহপালিত পশু পাখি
  • পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু
  • সূর্যরশ্মি
  • জাস্ট মাইট
  • মোল্ড বা ছত্রাক
  • বিভিন্ন ওষুধ
  • কীটনাশক
  • ডিটারজেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
  • রাবারের তৈরি গ্লাভস
  • স্ট্রেস বা মানসিক চাপ

যেসব খাবারে এলার্জি বেশি দেখা যায় তার মধ্যে হল-
  • চিংড়ি
  • বেগুন
  • ইলিশ মাছ
  • গরুর মাংস
  • বাদাম
এছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে ডিম ও দুধে এলার্জি দেখা যায়।

ত্বকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকেরই ত্বকে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ডাক্তার দেখানোর ফলেও কোন কাজ হয় না।  আবার কোন ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায় না। তাই এলার্জি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া হল-

টি- ট্রি অয়েলঃ ত্বকের এলার্জিতে টি- ট্রি অয়েল খুবই ভালো কাজ করে। এতে আন্টি-মাইক্রোবায়াল এবং এন্টি-ইনফ্লেমেটরি রয়েছে। যা ত্বকের এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।

আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপেল সিডার ভিনেগার এলার্জির চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিড আছে। যা এলার্জি চুলকানি কমিয়ে এলার্জির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। তবে আপেল সিডার ভিনেগার এলার্জির সমস্যা থাকলে ব্যবহার করা যাবে না।

 নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেলে থাকা ময়েশ্চারাইজিং উপাদান ত্বকে এলার্জির চুলকানি কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে এলার্জি থেকে রক্ষা করে। একটি বাটিতে কুসুম গরম নারিকেল তেল নিয়ে এলার্জি যুক্ত স্থানে লাগালে এলার্জি ও চুলকানি কম হয়।

এলোভেরা জেলঃ ত্বকে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হল এলোভেরা জেল। অ্যালোভেরা জেল এলার্জি স্থানে লাগালে এলার্জির চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কম হয়। সতেজ এলোভেরা জেল এলার্জির স্থানে লাগাতে হবে।

কোল্ড শাওয়ারঃ ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের জ্বালাপোড়া কম হয়। এবং ভেতর থেকে একটি প্রশান্তি আসে। যেহেতু গরমে এলার্জির জ্বালাপোড়া ও চুলকানি বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি এলার্জির জ্বালাপোড়া কমাতে অনেক সাহায্য করে।

চোখের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকের চোখে এলার্জি হয়ে থাকে। চোখে এলার্জির কারণে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ চুলকানো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাই চোখের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় দেওয়া হল-

গোলাপজলঃ চোখ চুলকালে বা চোখে এলার্জির অন্য সমস্যা দেখা দিলে চোখে দুই ফোটা গোলাপ জল দিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে। তাহলে চোখের এলার্জি সমস্যা দূর হবে। গোলাপ জল চোখের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে।

লবণপানিঃ এক গ্লাস পানিতে তিন চামচ লবণ মিশিয়ে ভালো করে ফুটাতে হবে। ফুটানো পানি ঠান্ডা হলে একটি তুলা নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে চেপে চোখের চারপাশে চেপে চেপে বুঝতে হবে। তাহলে চোখের জীবাণু দূর হবে এবং এলার্জি জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কম হবে।

ঠান্ডাপানিঃ ঠান্ডাপানি চোখের জন্য খুবই উপকারী। চোখে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিলে বারবার ঠান্ডা পানি ঝাপটা চোখে দিলে চোখে ময়লা দূর হবে এবং চোখে জ্বালা পোড়া কমে যাবে।

সানগ্লাসঃ চোখে এলার্জি সমস্যা থাকলে অবশ্যই বাইরে বের হওয়ার আগে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। সানগ্লাস চোখকে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। এবং চোখে ডাস্ট এলার্জি থাকলে অবশ্যই সানগ্লাস পড়ে বাইরে বের হতে হবে তাহলে এলার্জির সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

পরিছন্নতাঃ ঘর এবং বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখলে ধুলাবালি চোখে ঢুকতে পারে না। ফলে চোখে এলার্জি সমস্যা ভালো থাকে। তাই চোখকে এলার্জি থেকে রক্ষা পেতে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এবং নিয়মিত চোখ পরিষ্কার করতে হবে।

ঠান্ডা এলার্জি দূর করা ঘরোয়া উপায়

ঠান্ডা এলার্জি শুধু শীতকালেই তা নয়। ঠান্ডা এলার্জি গরমের সময়ও অনেক বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে। ঠান্ডা এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলো-

পেয়ারাঃ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। যা ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেয়ারাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় পেয়ারা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা দূর হবে।

ঘিঃ ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা প্রতিরোধে ঘি খুবই উপকারী একটি খাবার। প্রতিদিন খাবারের সাথে এক চামচ ঘি খেলে ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা দূর হয়।

কালোজিরাঃ কালোজিরা সকল রোগের মহা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাই ঠান্ডা জনিত অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে কালোজিরা নিয়মিত প্রতিদিন খেতে হবে। ঘুমানোর আগে এক চা চামচ কালোজিরা বা একটি কালোজিরার বড়ি খেলে ঠান্ডা জনিত অ্যালার্জির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

মধুঃ ঠান্ডার সমস্যা দূর করতে মধু খুবই উপকারী। বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবার জন্য মধু খুবই উপকারী। শীতের দিনে সকল ধরনের মানুষই মধু খেতে পারে। আর যাদের ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত দুই চামচ মধু খেলে ঠান্ডার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

এলার্জির সমস্যায় ভেষজ উপাদান

এলার্জি সমস্যা দূর করতে ঘরোয়া উপায় পাশাপাশি ভেষজ উপাদান অনেক উপকার করে। ভেষজ উপাদান ঘরোয়া উপায়ের একটা অংশ। এলার্জি সমস্যা ভেষজ উপাদান নিচে দেওয়া হল-

নিমপাতাঃ নিমপাতা ঔষধি গুনে ভরা। নিমপাতা ত্বকের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিমপাতার ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রকমের চুলকানি খসড়া ইত্যাদি ভালো হয়ে যায়। ত্বকের যেসব জায়গায় চুলকানি বা এলার্জির সমস্যা হয়েছে সেগুলোতে নিম পাতা লাগাতে হবে এবং নিম পাতা ভেজানো পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।

তুলসীপাতাঃ তুলসী পাতা বহুগুনে সমৃদ্ধ একটি পাতা। তুলসী পাতায় কর্পূর উপাদান থাকায় তুলসী পাতা ত্বকের জ্বালাপোড়া সহ চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার রস বের করে এলার্জি স্থানে লাগালে ভালো হয়ে যায়। এবং আদা ও তুলসী পাতা একসাথে পানিতে ফুটিয়ে নিয়মিত খেলে এলার্জি ভালো হয়ে যায়।

কলাঃ এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কলা খেলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়ে যায়। কলায় প্রচুর পরিমাণে  উপাদান ফ্যাটি উপাদান রয়েছে যা এলার্জি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

এলার্জির মারাত্মক প্রতিক্রিয়া গুলো

এলার্জিক উপাদানের তীব্র প্রতিক্রিয়া থেকে  অ্যানাফিল্যাক্রিস নামক একটি জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে রোগী মারা যেতে পারে। এমন রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। অ্যানাফিল্যাক্রিস হয়েছে কিনা তা বোঝার উপায় নিজে দেওয়া হল-
  • শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নেওয়ার সময় শো শো শব্দ হওয়া।
  • বুক- গলা আটকে আসছে বলে মনে হওয়া।
  • মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা অথবা গলা ফুলে যাওয়া।
  • ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যাওয়া।
  • জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি হওয়া।
  • বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা।
  • মাথা ঘুরানো বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
  • বুক ধরফর করা কিংবা শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া
  • চামড়ায় চুলকানি সহ লাল লাল ফুসকুড়ি হওয়া।
  • শরীরের কিছু জায়গা থেকে ফুসকা পড়া বা চামড়া উঠা।

এলার্জি প্রতিরোধের আরও কিছু ঘরোয়া উপায়

এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চলতে হবে এবং তার সাথে বেশি জরুরী বিষয় হলো যে সব বস্তুতে এলার্জি রয়েছে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এলার্জি প্রতিরোধে আরও কিছু উপায় নিজে দেওয়া হলো।-
  • এলার্জি হয় এমন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না।
  • গৃহপালিত পশুপাখি ঘর বাড়ির বাইরে তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • ডাস্ট মাইড নামক একপ্রকার অতি ক্ষুদ্র পোকা এলার্জি সৃষ্টি করে। এলার্জি প্রতিরোধ করতে বাড়ির যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় থাকা হয় সে জায়গা গুলো ধুলোবালি মুক্ত পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • চাদর কাথা বলিস ওর লেপের কভার জানালার পর্দা এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে দিতে হবে। আর যে জিনিসগুলো বেশি ধুলাযুক্ত সেগুলো বাসাতে না থাকাই ভালো যেমন কার্পেট।

পরিশেষে

এলার্জি খুবই কমন একটি সমস্যা। সবারই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে এলার্জি থাকে। তবে কোন খাবারে বা কোন জিনিসে এলার্জি আছে সেটা ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝা যায়। এলার্জি পুরোপুরি ভাবে কখনোই নির্মূল করা যায় না। তবে সচেতনভাবে চললে ভালো থাকা যায়।

এলার্জি সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় সহ এর লক্ষণ প্রতিকার সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো এই পোস্টের মাধ্যমে। এই পোস্টটি পড়লে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সহ সকল বিষয়ে জানতে পারবেন। নিয়মিত বিভিন্ন তথ্যমূলক আরো পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url