OrdinaryITPostAd

চালতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - চালতার আচার বানানোর নিয়ম

 চালতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - চালতার আচার বানানোর নিয়ম

চালতা এক প্রকার টক জাতীয় ফল। চালতার অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। এবং চালতা আচার হিসেবেও অনেক পরিচিত। তাই আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চালতার উপকারিতা, ঔষধি গুনাগুন এবং চালতার আচার বানানোর নিয়ম সকল বিষয় জানাবো।

চালতা গ্রাম বাংলার খুবই পরিচিত একটি ফল। বর্ষাকালে এই ফল ধরে থাকে। তবে বর্ষার শেষের দিকে এই ফল পাকে। চালতার অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। এবং চালতার আচার সবার কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি আচার। চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি।

চালতার বৈশিষ্ট্য

চালতা একটি টক জাতীয় ফল। এটি বাংলাদেশ, ভারত, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশি জন্মে। চালতার  ইংরেজি নাম Elephant Apple। এটি একটি অপ্রকৃত ফল। এ ফল আকারে ছোট হয়। এবং এটি প্রায় ১০-২০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৫-১০ সেন্টিমিটার ব্যাস। ফলের বাইরের অংশ সবুজ বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে এবং ভেতরে মাংসাল পুরু থাকে। 

এবং ফলের ভেতর ছোট ছোট বীজ থাকে। চালতা খেতে খুবই টক স্বাদের হয়ে থাকে। টক জাতীয় ফল হওয়ায় চালতা আচার, চাটনি বানানোর জন্য খুবই ভালো একটি ফল। এমনকি টক ডাল খাওয়ার জন্য এই ফলটি রান্নায় ব্যবহার করা হয়। আসলে চালতা ফলের যে অংশটি খাওয়া হয় সেটা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফলটি বৃতির ভেতরে থাকে। 

চালতার পুষ্টিগুণ ও উপাদান

চালতা অতি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। এর ফলে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, শর্করা, বিটা- ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, থায়ামিন, রিবফ্লোবিন, এবং আমিষ ও বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম চালতার পুষ্টিগুণ দেওয়া হল-
  • ক্যালোরি - ২৫
  • প্রোটিন - ১.১ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট - ৬৮ গ্রাম
  •  ফাইবার - ৩ গ্রাম
  • চিনি - ৩.৬ গ্রাম
  • চর্বি - ০.১ গ্রাম
  • ভিটামিন সি - ৪০ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন এ - ১০০০ আইইউ
  • ক্যালসিয়াম - ১০০ মিলিগ্রাম
  • আয়রন - ১ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম - ১৭০ মিলিগ্রাম

চালতা খাওয়ার উপকারিতা 

চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। চালতা ভিটামিন সি জাতীয় একটি খাবার। এবং চালতাতে অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানও অনেক বেশি রয়েছে। চালতা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে রক্ষা করে। চালতা চাটনি বা আচার জাতীয় খাবারের জন্য অনেক বেশি জনপ্রিয়। নিচে চালতা খাওয়ার উপকারিতা দেওয়া হলো-
  • চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিনের একটি ভালো উৎস।
  • চালতা পেটের বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ডায়রিয়া হলে কাঁচা চালতা তার রস করে খেলে দ্রুত ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়।
  • রক্তের খারাপ হলেস্টোরেল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
  • ঠান্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়ে যায়।
  • কিডনির নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • চালতা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এবং ত্বক ও চুলের যত্নে চালতা অনেক বেশি উপকারী।
  • নিয়মিত চালতা খেলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
  • চালতাতে থাকা এন্টি মাইক্রোভিয়াল উপাদান মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এবং মুখর  ভেতর থেকে বাজে গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

চালতার ভেষজ গুনাগুন

চালতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। চালতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চালতায় বিভিন্ন ভেষজ ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা নিচে দেওয়া হল-
  • ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, জ্বরে চালতা গাছের ছালের গুড়া খুবই উপকারী।
  • কচি চালতার রস খেলে বাতের ব্যথা দূর হয়।
  • চালতা গাছের মূল ও কচি পাতার রস খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়।
  • মুখের ঘা সারাতে চালতা খাওয়া খুবই উপকারী।
  • এছাড়াও চালতায় ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

রক্ত আমাশয় সারাতে চালতার পাতা ও মূলের উপকারিতা

চালতা খাওয়া যেমন উপকারী। তেমনি চালতা গাছের মূল ও কচি পাতায় রয়েছে ঔষধি গুনাগুন। রক্ত আমাশয় সারাতে চালতা গাছের কচি পাতা ও মূল অনেক উপকারী কাজ করে। চালতায় বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা বিভিন্ন রোগ সরাতে কাজ করে।

রক্ত আমাশয় সারাতে গাছের টাটকা পাতা বেটে রস এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। দিনে দুইবার করে এই রস খেলে এই সমস্যা অনেকটা উপশম ঘটবে। আবার হাত বা পা মচকে গেলে এই গাছের মূল ও পাতার রস ভালো করে বেটে প্রলেপ দিয়ে লাগালে ব্যথা কমে যাবে।

কফ ও সর্দি সারাতে চালতার ঔষধি গুনাগুন

চালতা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি খাবার। চালতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি সর্দি কাশি খুবই ভালো কাজ করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ঠান্ডা লাগা দূর হয়। অতিরিক্ত সর্দি কাশি সমস্যা সারাতে চালতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

চালতা গাছের শুকনো ছালের গুড়া এক গ্রাম চিনি ও মিছরি গুঁড়ো এক চামচ, আধা কাপ সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে একবার খেলে সর্দি কাশি ভালো হয়। এছাড়াও চালতা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।

ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে চালতার উপকারিতা

 চালতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই অতি পরিচিত ফলটি ত্বকের বার্ধক্য দূর করতে সাহায্য করে। চালতায় যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন, উপকারী ফ্যাট এবং অ্যামাইনো এসিড রয়েছে।

এই উপাদানগুলো খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এবং চালতায় থাকা ভিটামিন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং ভেতর থেকে টক্সিন দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করে তুলতে সাহায্য করে। চালতায় থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফ্লাভনয়েড এই তিন উপাদান ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে। এবং ত্বকে কোলাজেন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চালতার আচার বানানোর নিয়ম

চালতা খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। চালতার আচার বানানোর জন্য চালতা, চিনি, মরিচ, হলুদ লবণ সরিষা মেথি ইত্যাদি সব উপকরণ দিয়ে বানানো হয়। এবং চালতা ভাত, রুটি বা এমনি অথবা যে কোন খাবারের সাথে খাওয়া যায়। চালতার আচার বানানোর নিয়ম দেওয়া হল-

চালতা বানানোর উপকরণ-
  • চালতা ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে
  • লবণ - ১ চামচ 
  • চিনি - ১/২ কাপ
  • তেল - ১/২ কাপ
  • আদা  - ১ টেবিল চামচ 
  • রসুন -  ১ টেবিল চামচ 
  • হলুদ গুড়া - ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া - ১ চা চামচ 
  • ধনিয়া গুড়া - ১ চা চামচ 
  • জিরা গুড়া - ১ চা চামচ 
  • মেথি - ১ চা চামচ 

 চালতা টুকরো করে ধুয়ে কেটে নিতে হবে। তারপর গরম পানিতে ভালো করে সিদ্ধ করে পানি ছেকে নিতে হবে। এবার ঠান্ডা করে ছেঁচে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে রসুন, শুকনা মরিচ পাঁচফোড়ন তেজপাতা কিছুক্ষণ দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। 

তারপর গুড় দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। এর সঙ্গে মরিচ গুলা, রসুন বাটা, আদা বাটা, সরিষা বাটা, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি সবকিছু একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর কিছু পরিমাণ চিনি দিতে হবে। নামানোর আগে সিরকা দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। তাহলে দীর্ঘদিন রেখে খাওয়া যাবে।

চালতার অপকারিতা 

চালতা খুবই টক জাতীয় একটি ফল। তাই চালতা উপকারিতা থাকলেও অতিমাত্রায় চালতা খাওয়ার কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। চালতা খাওয়ার অপকারিতা দেওয়া হল-
  • চালতাই থাকা কিছু উপাদান এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই চালতা খাওয়ার পর যদি এলার্জির কোন প্রভাব দেখা দেয় তাহলে চলতা খাওয়া যাবেনা। 
  • চালতা একটি টক জাতীয় ফল হওয়ায় চালতা বেশি খেলে পেটে গ্যাস হয়।
  • এছাড়াও চালতা বেশি পরিমাণে খেলে তোকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

পরিশেষে

চালতা টক জাতীয় একটি ফল। যা আমরা নাগালে পেয়ে থাকি। চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। চালতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। ডাল বা তরকারির সাথে চালতা খাওয়া যায়। আবার চালতা আচার বা চাটনি হিসাবে বেশি খাওয়া হয়।

চালতার চাটনি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। ।তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে চালতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং চালতার আচার বানানোর নিয়ম সকল কিছু বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন তথ্যমূলক আরো পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url