ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিই
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিই
তালের শাঁস গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। গ্রীষ্মকালীন এই তালের শাঁস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা সহ সকল বিষয় বিস্তারিত জানা যাবে এই পোষ্টের মাধ্যমে।
তালের শাঁস গ্রীষ্মকালীন সুপার ফুড হিসেবেও বলা যায়। তালের শাঁসের বেশিভাগ অংশই জলীয়। তালের শাঁস পানির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তালের শাঁস খুবই উপকারী। তালের শাঁস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
তালের শাঁস কি
তালের শাঁস বা আইস আপেল সাধারণত নুঙ্গু নামে পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ভারতের তালের শাঁস বেশি পাওয়া যায়। তামিলনাড়ুর বিভিন্ন রাস্তায় তালের শাঁস অনেক বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তাল গাছে গুচ্ছ আকারে এরপর জন্মায়।
তালের আকার দেখতে অনেকটা নারকেলের মত। এবং এর গায়ের রং চকচকে কালো। ফলের ভেতরটা দেখতে স্বচ্ছ জলের মতো। তালের শাঁসের ভেতরেও নারকেলের মত স্বচ্ছ জেলির মত থাকে। এবং নারকেলের ভেতরে যেমন মিষ্টি পানি থাকে। তেমনি তালের শাঁসের ভিতরেও মিষ্টি পানি থাকে। এই মিষ্টি পানি খুবই পুষ্টিগুনে ভরা। তাই গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়া খুবই উপকারী।
তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ
তালের শাঁসে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাকা তালেও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। এবং পাকা তালের রস থেকে তালমিসরি বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন হিসেবে কাজ করে।
কচি তালের শাঁসের ১০০ গ্রাম খাদ্যে রয়েছে,
- খাদ্য শক্তি - ২৯ কিলোক্যালরি
- জলীয় - ৯২.৩ গ্রাম
- শর্করা - ৬.৫ গ্রাম
- খাদ্য আঁশ - o.২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ৪৩ গ্রাম
- ভিটামিন সি - ৪ মিলিগ্রাম
পাকা তালের রসের ১০০ গ্রাম খাদ্যে রয়েছে,
- খাদ্য শক্তি - ৮৭ কিলোক্যালরি
- জলীয় - ৯২.৩ গ্রাম
- শর্করা - ৬.৫ গ্রাম
- খাদ্য আঁশ - ০.২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ৪৩ গ্রাম
- ভিটামিন সি - ৪ মিলিগ্রাম
তালের শাঁসে খাওয়ার উপকারিতা
গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে তালের শাঁস অন্যতম একটি খাবার। তালের শাঁস খেতে অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি। দেখতে জলির মত। তালের শাঁসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ফাইবার ও খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তালের শাঁসে খাওয়ার উপকারিতা নিচে দেওয়া হল-
পানি শূন্যতা রোধ করতেঃ তালের শাঁসে পুরোটাই পানি থাকে । আর শরীরে দ্রুত কানের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই পানি ও পানি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালে এই ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
পেটের সমস্যায়ঃ অতিরিক্ত গরম অনেকেরই পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তালের শাঁসে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়। তালের শাঁস পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এটি পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম এবং গ্যাসের সমস্যা কম করে।
ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য ঠিক রাখতেঃ তালের শাঁসে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। যা শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যা শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
লিভার ভালো রাখতেঃ তালের শাঁস লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি লিভারের ভেতর থেকে ক্ষতিকর ও দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা দূর করতেঃ তালের শাঁসে খনিজের ও আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় তালের শাঁস খেলে রক্তশূন্যতা দূর করা যায়। এবং নিয়মিত তালের শাঁস খেলে শরীরে অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তালের শাঁসে খুবই উপকারী। তালের শাঁসে প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকায় শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তালের শাঁস গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা দূর করতে তাদের কাজ খুবই উপকারী। তালের শাঁসে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়।
গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকায় তালের শাঁস গর্ভবতী মায়ের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। এছাড়াও তালের শাঁসে আয়রন ও খনিজের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে রক্তশূন্যতা ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খুবই উপকারী একটি খাবার যা শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে থাকে। এবং গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে হাতের নাগালে এই ফল পাওয়া যায়। গর্ভাব গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এবং তালের শাঁস মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
শিশুদের তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা
তাল গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। তালের শাঁস শিশুদের জন্য খুবই উপকারী এবং পছন্দের একটি খাবার। গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায়। আর তালের শাঁস ও তেমনি একটি ফল যা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ একটি ফল। শিশুদের তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা নিচে দেওয়া হল-
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
- আয়রনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
- দৃষ্টিশক্তি সচল রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তালের শাঁসের উপকারিতা
তালের শাঁস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। অনেকে মনে করে পাকা তালের রস খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে। কিন্তু না পাকা তালের রস, তালের শাঁস, এবং তালের আঁটি থেকে যে আঁশ পাওয়া যায় সেটা খেলেও ডায়াবেটিস বাড়েনা। আরো ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তালের শাঁস মিষ্টি ও সুস্বাদু হলেও এতে ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার বাড়ে না। তালের শাঁসে প্রচুর ভিটামিন থাকে। কিন্তু ক্যালরি ও সুগারের পরিমাণ কম থাকায়। ডায়াবেটিস রোগীরা নির্ভয়ে এই ফল খেতে পারে। তাই স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তালের শাঁস খাওয়া উপকারী।
পাকা তাল খাওয়ার উপকারিতা
পাকা তালও কচি তালের মত অনেক ভিটামিন রয়েছে। পাকা তাল খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর করতে সাহায্য করে। পাকা তালের উপকারিতা দেওয়া হলো-
- পাকা তালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং স্মৃতিশক্তি প্রখর করে।
- তাল মিছরি খেলে অনেক দিনের পুরনো কাশি দূর হয়ে যায়।
- পাকা তাল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং খুদা মন্দ দূর করে।
- তালে থাকা ক্যালসিয়াম ফসফরাস হাড় ও গঠনে সাহায্য করে।
- তালের শাঁস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- তালের শাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
তীব্র গরমে তালের শাঁসের উপকারিতা
অতিরিক্ত গরমে তালের শাঁস খাওয়া খুবই উপকারী। ডাবের পানিতে যে পরিমাণ উপকার রয়েছে তালের শাঁসেও সমপরিমাণ উপকার পাওয়া যায়। তাই অতিরিক্ত গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে তালের শাঁস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। নিয়মিত এই খাবারটি খেলে শরীর সুস্থ থাকে।
শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। তালের শাঁসেও যে পরিমাণ পানি আছে তা কোন মানুষের জন্য খুবই উপকারী। তালের শাঁস ভিটামিন, খনিজ ও আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় তালের শাঁসে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
তালের শাঁস সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
তালের শাঁস সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই তালের শাঁস ভালো রাখার জন্য বক্সে করে ফ্রিজে রাখতে হবে।
এবং টাটকা গাছ থেকে পড়া তাল কেনার চেষ্টা করতে হবে। কেনার সময় দেখতে হবে যে তালের গায়ে কোঁকড়ানো না থাকলে বুঝতে হবে যে এটি গাছ থেকে পাড়া তাজা ফল।
পরিশেষে
তালের শাঁস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এবং ছোট বড় সব বয়সী মানুষ এ ফল খেতে পারে। এবং গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে হাতের নাগালে মানুষ এই ফল পেতে পারে। এবং পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ এই ফল ডায়াবেটিস রোগী সহ সকল মানুষ এই ফল খেতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের তালের শাঁসের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সহ সকল বিষয় আলোচনা করা হলো। নিয়মিত তথ্যমূলক পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url