পুকুরে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি এবং চিংড়ি চাষের ১০ টি অর্থনৈতিক গুরুত্ব
চিংড়ি চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চিংড়ি চাষের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। তাই পুকুরে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি এবং চিংড়ি চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়াও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কি ভাবে ধান এবং চিংড়ি একসাথে চাষ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর পুকুরে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়। তাই চিংড়ি চাষ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
চিংড়ি চাষ
চিংড়ি স্বাদু পানি ও হালকা লবণযুক্ত পানিতে ভালোভাবে চাষ করা হয়। বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের চাষ করা হয়। আবার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের স্বাদু পানি দ্রুত বর্ধনশীল এবং চিংড়ি চাষের মধ্যে গলদা চিংড়ি বেশি পরিচিত।
বিভিন্ন দেশের গলদা চিংড়ি আধুনিক পদ্ধতিতে ও চাষ করা হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদন প্রতি একরে ১২০০ থেকে ২৫০০ কেজি হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে গলদা চিংড়ি চাষ খুব বেশি পরিচিত নয় বলে চাষীরা তেমন চাষ করেন না।
একটি ফাঁকা জমিতে পানি দিয়ে সেখানে প্রস্তুত করনের পর মিঠাপানির গলদা চিংড়ি চাষ করার উদ্দেশ্যে ও অধিক আয়ের উদ্দেশ্যে চিংড়ি ছেড়ে দাও ওকে চিংড়ি চাষ বলা হয়। আমাদের দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমে গেলেও মানুষের খাদ্য চাহিদা বেড়ে গেছে।
চিংড়ির চাষ পদ্ধতি
পুকুরে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হওয়া যায়। এবং বিভিন্নভাবে চিংড়ি চাষ করা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি মূলত দুইভাবে হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
- একক চাষ পদ্ধতি
- মিশ্রিত চাষ পদ্ধতি
একক চাষ পদ্ধতিঃ শুধুমাত্র এই মাছের ক্ষেত্রে একক চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো অন্য মাছের সাথে চাষ করা যেতে পারে। এ চাষ পদ্ধতিতে প্রতি শতকে ১০০-১১০ পোনা মজুর রাখতে হয়। যদি এর থেকেও আরো বেশি ভালো ব্যবস্থা করা যায় তবে প্রতি শতকে ২০০-৩০০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। এ চাষ পদ্ধতিতে প্রতি একর জমিতে উৎপাদন করা যায় ৪০০-৫০০ কেজি মাছ।
মিশ্রিত চাষ পদ্ধতিঃ এ চাষ পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি ছাড়াও অন্য জাতীয় মাছ যেমন রুই মাছ সিলভার মাছ পাঙ্গাস মাছ ও অন্যান্য মাছ ও চাষ করা যাবে। এ চাষ পদ্ধতি বেশি লাভজনক কারণ অন্য জাতীয় মাছ ও চাষ করা যায় বলে। এখানে চিংড়ি ছাড়া অন্য মাছগুলো ৩-৪ টি মজুদ করতে পারবে।
যেহেতু অন্যান্য মাছের তুলনায় চিংড়ির দাম বেশি তাই এর বাজার দাম অনেক বেশি। এক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ গ্রাম আকারের অন্য মাছ দিতে হবে। তবে মিশ্রিত মাছের সাথে এমন কোন মাছ দেয়া যাবে না যা চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর কারণ অন্যান্য মাছ কম দামে হলেও চিংড়ির দাম বেশি।
চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতিকরণ
আমরা গলদা চিংড়ি বা যে ধরনেরই মাছ চাষ করি না কেন তার জন্য প্রথমে আমাদেরকে চাষ করার জায়গা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা হোক নদী, পুকুর, খাল ও বিল। তবে আমরা চিংড়ি চাষ করার জন্য পুকুর নির্বাচন করব এবং কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় তা জানবো।
- গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর একটি উপযোগী জায়গা। চিংড়ি চাষ করার জন্য প্রথমে একটি শুকনো পুকুর নিতে হবে।
- এরপর দেখতে হবে যে পুকুরের পাড় গুলো ভাঙ্গা কিনা যদি ভাঙ্গা থাকে তাহলে যে কোন উপায়ে সেগুলোকে মেরামত করতে হবে। চাষের জন্য পুকুরের গভীরতা ১.০-১ .৫ মিটার হতে হবে।
- তবে পুকুরের আয়তন ১ হেক্টর এবং আয়তাকার হলে চিংড়ি চাষ করা বেশি সুবিধা হবে।
- আবার দেখতে হবে যে পুকুরে কোন ক্ষতিকর জীবাণু আছে কিনা যদি থাকে তাহলে সেগুলোকে আগেই মেরে ফেলতে হবে তা না হলে জীবাণুগুলো মাছ চাষ করতে বাধা দিবে।
- চাষ করার জন্য পুকুর শুকনো হতে হবে এতে করে পুকুরে গুনাগুন বৃদ্ধি পায়। তলদেশের অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাই এবং যে মাছগুলো অন্য মাছকে ক্ষতি করবে সে মাছগুলো সহজে মারা যায় আবার প্রাকৃতিকভাবে খাদ্য উৎপাদন পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- পুকুরটি খোলামেলা হতে হবে এবং যেন সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পাই সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানি সরবরাহ ও নিকাশ ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং দুর্যোগ বা বন্যা আসলে যেন পানি ঢুকতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
- মাটির গুনাগুন মাটির পিএইচ মাটিতে কোন সার প্রয়োগ করলে ক্ষতি হবে কিনা তা আগে থেকেই নির্বাচন করে নিতে হবে। তবে চাষ করার জন্য এটেল দোআঁশ ও বেলে মাটি বেশি উপযোগী।
- পানির তাপমাত্রার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে কারণ যতটুকু পানি তাপমাত্রা দরকার তার থেকে বেশি হয়ে গেলে মাছ মারা যেতে পারে।
- পুকুর শুকানোর সময় তলায় ছিদ্র করে দিতে হবে। কিন্তু মাটি যদি এসিড সালফেট যুক্ত হয় তাহলে ছিদ্র করা প্রয়োজন নেই। প্রতি শতাংশে এক কেজি করে চুন দিতে হবে এতে মাটি ও পানির গুনাগুন বৃদ্ধি পাবে এবং পানি ঘোলা হবে না ।
- চাষ করার জন্য সার হিসেবে গোবর ৩০০ কেজি, ইউরিয়া ২৫ কেজি, টি এস পি ৫ কেজি, সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পানি মিশিয়ে প্রতি হেক্টর পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে যা ভালো মাছ ফলনের জন্য উপকারী।
পোনা মজুদ করা এবং মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
পোনা মজুদ করার পূর্বে চিংড়ির জন্য আশ্রয়স্থল খুঁজে রাখতে হবে কারণ নির্দিষ্ট জায়গার দরকার। এরা অতি তাড়াতাড়ি খোলস পরিবর্তন করে থাকে কারণ খোলস বদলানোর মধ্যে দিয়ে এরা বড় হয়। তবে খোলস বদলানোর সময় এরা এদের প্রদত্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে বলে অত্যান্ত দুর্বল হয়ে যায়। পোনা মজুদ করতে হয় তখনই যখন পুকুরের পানি সবুজ থাকে।
এক্ষেত্রে চাষের জন্য প্রতি শতাংশ জায়গায় ১০০ থেকে ১২০ টি পোনা ছাড়তে হয়। তবে চাষ করার সময় যদি অন্য জাতীয় মাছ ছাড়া হয় তবে এক্ষেত্রে আলাদা হবে তখন অন্যান্য মাছ একটা বা দুইটা করে ছাড়া যাবে।
পোনার বেঁচে থাকা পর্যবেক্ষণ করাঃ পোনা পরিবহনের সময় যদি কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে পোনা গুলো মারা যেতে পারে তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন রোগাক্রান্ত না হয়। যদিও মারা যায় তবে এগুলো তাড়াতাড়ি পানিতে ভেসে উঠবে।
তাই পোনা ছাড়ার পূর্বে দেখতে হবে যে পোনা গুলোর মধ্যে মৃত পোনা আছে কিনা যদি থাকে তাহলে সেগুলোকে আলাদা করে বের করে নিতে হবে না হলে পুকুরে ছেড়ে দিলে পরবর্তীতে জীবিত পোনা গুলোর ক্ষতি হতে পারে।
চিংড়ির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করাঃ চিংড়ি চাষ করার জন্য আমাদের সবদিকেই খেয়াল রাখতে হবে তার মধ্যে বেশি খেয়াল রাখতে হবে এর স্বাস্থ্যের দিকে কারণ এর স্বাস্থ্য যত বেশি ভালো হবে তত বেশি ফলন হবে। এ মাছের দৈনিক গড় বৃদ্ধির হার ২-৫ গ্রাম হতে হবে।
মোট মজুদকিত চিংড়ির ৮০ শতাংশ বেঁচে থাকার হার ধরে নমুনার জন্য চিংড়ির গড় ওজন দিয়ে গুন করে মোট ওজন বের করতে হবে। এর ওপর ভিত্তি করে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ করাঃ পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। পরিমাণে বেশি প্রয়োগ করলে পুকুরের ও চাষ করা মাছের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য প্রতিদিন সার দেওয়ার দরকার নেই কিন্তু ১৫ দিন পর পর পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে।
সার হিসেবে গোবর ইউরিয়া টিএসপি ও এম ওপি সার ব্যবহার করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পানির রং সবুজ না হয় যদি পানির রং সবুজ হয়ে যায় তাহলে সার দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ করাঃ এর রোগ প্রতিকার করা যতটা কঠিন তার থেকে প্রতিরোধ করা বেশি সহজ। প্রতিরোধ করার জন্য অল্প কিছু বিষয় মনে রাখলেই চলবে। যেগুলো মনে রাখতে হবে সেগুলো হলো পুকুরের পানি কোনো ভাবে যেন ঘোলা না হয় , কোন জীবাণু যেন ঢুকতে না পারে, তাপমাত্রা যেন বৃদ্ধি না পাই এগুলো বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে তাহলে সহজে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
চিংড়ি চাষের সুবিধা সমূহ
- বাজার মূল্য চাহিদা বেশি এবং সহজে ক্রয় বিক্রয় করা যায় যা চাষীদের জন্য সুবিধা জনক।
- রোগবালাই কম হয় এবং কম খরচে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
- খাদ্য তৈরি করার জন্য উপাদান হিসেবে সহজে পাওয়া যায়।
- প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে সহজে পাওয়া যায়।
- পোনা সহজে সংগ্রহ করা যায়।
- এককভাবে চাষ করা যায় ।
- স্বাদু লবণাক্ত পানিতে সহজে চাষ করা যায়।
- অন্যান্য মাছ ও যেকোন কৃষি জমিতে চাষ করা যায়।
- আমদানি রপ্তানি করার সুযোগ আছে বলে অনেক বেশি মূলধন ও পাওয়া যায়।
- খাদ্য খরচ কম বলে বাজার চাহিদা বেশি।
চিংড়ি মাছ সংগ্রহ ও বাছাইকরণ
আমাদের দেশে তেমনভাবে চিংড়ি চাষ করা হয় না। যারা করেন তারা করে অভ্যস্ত বলে এ চাষ করে থাকেন। তবে ধাপে ধাপে চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করা ও বাছাই করে ক্রয় বিক্রয় করা তেমনটা কঠিন কাজ নয়। একই সাথে একই সাইজের চিংড়ি মজুদ করা হলেও এদের বৃদ্ধি কিন্তু একই রকম হয় না।
যে পরিমাণে চিংড়ি ছাড়া হয় ঠিক সে পরিমাণ যে চিংড়ি উৎপাদন হবে তা কিন্তু নয়। প্রথমত পুকুরে চিংড়ির যে পোনা গুলো ছাড়া হয় সেগুলো দেখতে একরকম থাকে কিন্তু যখন এগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে তখন দেখতে বিভিন্ন রকমের হয়ে যায়।
চিংড়ির পোনা ছাড়ার ৩-৪ মাসের মধ্যে সব চিংড়ির ওজন একই রকম হয় না। কিছু কিছু চিংড়ির ওজন ১০০-১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। আবার কিছু চিংড়ির ওজন অনেক বেশিও হয়ে থাকে। যেমন এক একটি মাছের ওজন ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
তাই চিংড়ি মাছগুলোর পোনা ছাড়ার পর যখন বড় হয়ে যাবে তখন অতি তাড়াতাড়ি পুকুর থেকে মাছ তুলে নেওয়া ভালো। এক্ষেত্রে পুকুরের বাকি যে মাছগুলো রয়েছে সেগুলো তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে। আবার বেশি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
মাছ দ্রুত পচনশীল। যেহেতু মাছ তাড়াতাড়ি পচে যায় তাই খুব সতর্কতার সাথে তুলতে হবে এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কারণ একবার একটা মাছ পচে গেলে বাকি যে সকল মাছগুলো রয়েছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই সতর্ক থাকতে হবে ।
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি
ধান খেতে গলদা চিংড়ি চাষ করার সুবিধা বেশি কারণ এমন একটি ফসল এটি যে এর সাথে গলদা চিংড়ি ছাড়াও অন্য জাতীয় মাছও চাষ করা যায়। ধান খেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মুখ্য ফসল এবং গলদা চিংড়ি হলো গৌণ ফসল।
যেসব জমি অনেক নিচু সেসব জমিতে চিংড়ি চাষ করা বেশি সুবিধা। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি চাষ বেশি হয়। তবে সব ধরনের জমিতে চাষ করা সম্ভব নয়। ধান এমন একটি ফসল যার সাথে সব জাতীয় মাছ চাষ করা যায়।
যেগুলো জমিতে অনেক মাস যাবত পানি থাকে সেগুলোতে মাছ চাষ করা সম্ভব না কারণ মাছগুলো পচে যেতে পারে। ধান চাষের সাথে চিংড়ি চাষ করতে হবে জমিতে অবশ্যই ৫-৬ ইঞ্চি জায়গা থাকতে হবে এবং পুকুরের গর্ত এমনভাবে করতে হবে যে যখন পানি কম থাকবে তখন যেন মাছগুলো গর্তের নিচে থাকে।
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ করার সুবিধা
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ করার বেশ সুবিধা রয়েছে কারণ অন্য কোন কৃষি জমিতে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব না। ধানক্ষেত এমন একটা জমি যেখানে চিংড়ি ছাড়াও অন্য সকল মাছ চাষ করা সুবিধা বেশি। ধানক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ করার সুবিধা গুলা হলোঃ
- ধান ও চিংড়ি চাষ করার ফলে দুইটা ফসলেরই ফলন ভালো হয়।
- একসাথে চাষ করার ফলে কৃষক আর্থিক দিক থেকে বেশি লাভবান হয়।
- গলদা চিংড়ি চাষ করা হয় বলে পানির ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে।
- গলদা চিংড়ি যে সকল খাদ্য খায় না সে খাদ্যগুলো ধানক্ষেতের সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- যেহেতু আগে থেকে ধান ক্ষেতে প্রাকৃতিকভাবে সার দেওয়া থাকে তাই চিংড়ি চাষ করার সময় তেমন ভাবে সার প্রয়োগ করতে হয় না।
- চিংড়ি যে মলমূত্র ত্যাগ করে সেগুলো জমির উর্বরতা বাড়ায়।
- অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে চিংড়ি সহজে চলাচল করতে পারে।
- ধান ক্ষেতে যে পোকামাকড় গুলো থাকে এবং ধানের ক্ষতি করে সেগুলোকে চিংড়ি খেয়ে ফেলে।
- চাষ করার সময় যদি কম অর্থ প্রয়োগ করা হয় তাতেও কৃষক বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।
- ধান ও চিংড়ি একই সাথে চাষ করা হয় বলে পানি বিভিন্ন ধরনের সার অল্প পরিমাণে ব্যবহার করলেই চলে।
গলদা চিংড়ি চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। এই চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা আর্থিক দিক থেকে অনেক লাভবান হয় এছাড়াও গলদা চিংড়ি চাষ করে আমরা বিদেশে আমদানি রপ্তানি করতে পারি বলে অনেক মূলধন অর্জন করা সম্ভব হয়।
পুকুরে চাষ করা যেমন সুবিধা ঠিক তেমনি এর অর্থনৈতিক দিক ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বেশিরভাগ চাষির আইন ধানক্ষেতের সাথে গলদা চিংড়িও চাষ করে থাকেন। কারণে এতে অল্প টাকাতে বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা যাই। এর অর্থনৈতিক গুরুত্বগুলো হলঃ
- বর্তমানে শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে এর অর্থনৈতিক চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
- বাজারজাত মূল্য অনেক বেশি বলে এবং এই চাহিদা বাড়ছে বলে অনেক চাষীরাই চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
- যত বেশি চাষের পরিমাণ বাড়বে তত বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
- আবার অন্যদিকে চিংড়ি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। যা দেশের জন্য লাভজনক।
- চিংড়ি চাষ বেশি হচ্ছে বলে এটি আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করছে।
- অল্প জায়গাতে অল্প সময়ের মধ্যে এই চাষ করা যায়।
- যদি পরিকল্পনা নিয়ে চিংড়ি চাষ করা যায় তবে আরো বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
- পোশাক শিল্পের পরে চিংড়ি শিল্পের অবদান বেশি।
- বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ি অবদান ৭০ শতাংশ।
- দিন দিন রপ্তানি করে অর্জিত আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় সুবিধা।
পরিশেষে
গলদা চিংড়ি বাংলাদেশ চাষ করা অনেক সুবিধা। যারা বেকার রয়েছে তারা অতি সহজে এই চিংড়ি চাষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিতে পারবে। আবার যে সকল চাষীদের কৃষি জমি ফাঁকা রয়েছে তারা গলদা চিংড়ির সাথে ধান চাষ করতে পারবেন।
আমাদের দেশে বেকার মানুষদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই যাদের চাষ করার মত জায়গা আছে তাদের উচিত গলদা চিংড়ি চাষ করা এতে করে তারা আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হতে পারবেন। বর্তমানে গলদা চিংড়ি চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
যে সকল চাষিরা শুধুমাত্র ধান চাষ করেন তাদের উচিত এর পাশাপাশি গলদা চিংড়ি ও চাষ করা এতে করে তারা যেমন উপকৃত হবেন তেমনই বাংলাদেশ ও আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধশালী হবে। তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন। নিয়মিত তথ্যমূলক আরো পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url