রেশম চাষ পদ্ধতি এবং রেশম চাষের ১০ টি অর্থনৈতিক গুরুত্ব জানুন
রেশম চাষ অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই রেশম চাষের পদ্ধতি এবং রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সহ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। পুরো আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রেশম চাষ লাভজনক একটি শিল্প। রেশম চাষের মাধ্যমে অল্প পুজিতে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়। এবং এই শিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য থাকায় অনেকেই এই শিল্প এখনও ধরে রয়েছে। তাই রেশম চাষ পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিস্তারিত জানুন আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
রেশম চাষ কি
রেশম সুতা উৎপাদন করার জন্য রেশম পোকাকে যত্ন সহকারে লালন পালন করাকে রেশন চাষ বলে। আবার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রেশম কীটের চাষ করাকে রেশন চাষ বলা হয়।। চীনারা প্রথম রেশন চাষ শুরু করেন খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে । রেশম চাষ কে ইংরেজিতে সেরিকালচার বলা হয়। যে সময় থেকে চীনারা প্রথম রেশম চাষ শুরু করে সেই সময় থেকে ভারত বর্ষ এক প্রকার রেশম চাষ করা হয়। তারা এ চাষ কে ৩ টি ভাগে ভাগ করেন।
রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি তাই এখন বেশিরভাগ মানুষ জন রেশম চাষ করে থাকে। রেশম চাষ একটি লাভজনক চাষ পদ্ধতি। কারণ এই চাষ একবার করলে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত রেশম গাছে পাতা সংগ্রহ করা যায়। এ চাষ করলে বছরে চারবার সুতা পাওয়া যায়। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে রেশম চাষ করা হয়।
আমরা সবাই কমবেশি রেশম চাষ করতে দেখেছি। কিন্তু রেশম যে একটি কিট জাত পদার্থ তা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা। আমরা মূলত একপ্রকার পতঙ্গ থেকে রেশম পাই।, রেশম উৎপাদনকারী কিট বা রেশম কিটের পূর্ণতা প্রাপ্তির পর তার দেহের চারপাশে গুটি দিয়ে লালা তৈরি হয়।
রেশম তৈরি হয় মূলত গুটি থেকে। এটি সাধারণত আর্থোপোডা পর্বের insecta শ্রেণীর lepidoptera বর্গের দুটি গোত্রে বেশ কয়েকটি প্রজাতি রেশম উৎপাদন করে থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে bombyx mori থেকে মূলত রেশম উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
রেশম চাষ অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রেশম চাষের মাধ্যমে আমরা যে রেশম কাপড় তৈরি করি বিদেশে এর চাহিদা অনেক বেশি থাকায় রেশম চাষের মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। রেশম চাষের আরো কিছু অর্থনৈতিক গুরুত্ব দেওয়া হল-
- অন্যান্য ফসলের তুলনায় রেশম চাষে অধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়ে থাকে ১ হেক্টর জমিতে রেশম চাষ করলে প্রায় ১২ থেকে ১৩ জন লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব যা অন্য কোন ফসল চাষ করলে সম্ভব নয়।
- রেশম চাষে কমপক্ষে বছরে চার থেকে পাঁচ বার বা তারও বেশি ফসল চাষ করা যায় এবং এই চাষের ফলে অধিক লাভবান হওয়া যায় যা রেশম চাষ ছাড়া অন্য কোন ফসল চাষের ক্ষেত্রে কম হবে।
- তুত গাছ ৩০-৩৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে বলে আমরা সহজেই এ চাষ করতে পারি।
- একবার এ গাছ লাগালে এবং সীমিত পরিমানে যত্ন করলেও অধিক অর্থ উপার্জন করা যায় যা আমাদের জন্য উপকারী বেশিরভাগ চাষিরাই এই গাছ লাগিয়ে অনেক ফসল উৎপাদন করে অনেক আয় করে থাকেন।
- এ শিল্পে ফসল লাগানোর সময় কম পরিমাণে মূলধন প্রয়োগ করলেও উৎপাদন করার সময় বেশি পরিমাণে মূলধন পাওয়া যায় যেটি শুধুমাত্র এই শিল্পের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে
- তিন থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে রেশম গুটি উৎপাদন এবং আট থেকে দশ হাজার টাকা দিয়ে রেশম সুতা এবং ১৫ থেকে ২০ হাজার বা কারো কম টাকা দিয়ে রেশম কাপড় উৎপাদন সহজেই করা যায়।
- যে পরিমাণ কম টাকায় রেশম চাষ এবং উৎপাদন করা যায় সেই পরিমাণ টাকা অন্য চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে কখনোই সম্ভব না।
- রেশম চাষ করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যায় যা দেশের জন্য সুবিধা এবং এর ফলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
- রেশম চাষ করলে বেশি পরিমাণে মূলধন পাওয়া যায় বলে এটি দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- রেশম চাষের ফলে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হতে পারছে যেহেতু রেশম চাষে বেশি টাকা খরচ করতে হয় না তাই বেশিরভাগ ই পরিবার এ চাষ করতে পারেন।
রেশম চাষের সুবিধা
রেশম চাষের অনেক বেশি সুবিধা জনক হওয়ায় সহজে এই চাষ করা যায়। এবং এর অর্থনীতি গুরুত্ব অনেক বেশি। রেশম চাষের সুবিধা গুলো নিচে দেওয়া হল-
- এই গাছের সবথেকে বড় সুবিধা হল অনেক কম সময়ের মধ্যেও এবং কম যত্নের ফলেও বেশি পরিমাণে রেশম পাওয়া যায়। এ চাষ করলে বছরে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বার ফসল ফলানো যায়।
- যে সময়ে চাষীদের ঘরে কোন অর্থকরী ফসল থাকে না এবং চাষ করারও সুযোগ সুবিধা থাকে না তখন চাষীরা রেশম চাষ করে অনেক লাভবান হতে পারবেন।
- রেশম গুটি বছরে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বার উৎপাদন করা যায় যা চাষীদের জন্য অনেক সুবিধা জনক প্রক্রিয়া।
- এই শিল্পে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জাম পাওয়া যায় যেমন জাল ,বিভিন্ন দালা,তাঁত এগুলো বেশিরভাগ তৈরি করেন গ্রাম এর মানুসেরা।
- বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কার্পেট জাতীয় জিনিস উৎপাদনের জন্য এই শিল্প ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সুতা তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয় যা আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
- তাছাড়া এটি জৈব সার, তুত পাতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের গড় বাদী পশুর খাদ্য এছাড়াও অনেক পশুপাখি খাদ্য এই শিল্পে উৎপাদন করা হয়।
- রেশম শিল্পের কোন বস্তুই অপ্রয়োজনীয় নয় এ শিল্পের কোন না কোন বস্তু , সুতা, বস্ত্র আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় যা আমরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারি।
- যারা গ্রামে বাস করে এবং যারা গ্রাম থেকে শহরে আসতে চাই কিন্তু পারে না তারা মূলত গ্রামে বসেই এই শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানায় যা তাদের জন্য অনেক সুবিধা জনক।
- গ্রামের গরীব ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য রেশম চাষ ব্যবস্থা বেশি সুবিধা দেয় এর ফলে গরিব চাষিরা বেশিরভাগ সময় বাড়তি আয় করেন। এই শিল্প
- এ শিল্পের কারিগরি বিষয় গুলো সহজ এ জানা যাই। গ্রাম ছাড়াও শহরে বা এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে কিছু অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মানুষজন বাস করে যারা অতি সহজে এই শিল্প আয়ত্তে আনতে পারবেন।।
রেশম চাষের পদ্ধতি
রেশম চাষ পদ্ধতি অন্যান্য চাষ পদ্ধতি তুলনায় সহজ। কিন্তু এই সম্পর্কে আগে জানতে হবে যেমন এই চাষ পদ্ধতির খরচ কেমন, কোন কোন জেলায় চাষ করা হয়, কোন মাটি চাষ করার জন্য উপযোগী, এর সুবিধা- অসুবিধা , রেশম চাষ পদ্ধতি এগুলো সবই জানতে হবে না হলে সহজে চাষ করা সম্ভব হবে না তাই আমরা নিতে এ সম্পর্কে জানবো।
তুঁত গাছের পাতা সংগ্রহঃ সর্বপ্রথম আমাদেরকে এই গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করতে হবে। এ পাতা অনেকভাবে সংগ্রহ করা যায় যেমন এই গাছের বাগান বানিয়ে, আবার যারা এ পাতা বিক্রয় করেন তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে এছাড়াও যে কোন উপায়ে এই পাতা সংগ্রহ করতে হবে তা না হলে তা না হলে রেশন চাষ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
রেশম গাছের লার্ভা সংরক্ষণ করাঃ দ্বিতীয়ত আমাদেরকে রেশন গাছে লার্ভা গুলোকে সংরক্ষণ করে আনতে হবে এর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে এর মধ্যে একটি হলো শীতকালের সময় । এই সময় ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে । তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য হিটার এবং বেশি তাপমাত্রা লাইট ব্যবহার করতে হবে তবে ঘরের তাপমাত্রা কিছুক্ষণ পর পর থার্মোমিটার দিয়ে মাপতে হবে। রেশম গাছের লার্ভা গুলো অবশ্যই ভালো মানে হতে হবে।
ডিম ফুটানোঃ আমরা যদি ভালোভাবে ডিম ফুটাতে চাই এবং ভালো মানের ডিম সংগ্রহ করতে চায় তাহলে অনেকগুলো ধাপ মনে রাখতে হবে। ভালো মানের ডিম হলে দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যেই বাচ্চা বা লার্ভা পাওয়া যাবে। ডিম গুলো সংগ্রহ করার পর ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে তারপর মেডিসিন যুক্ত পানির মধ্যে ভিজিয়ে ডিম গুলোকে শোষণ করতে হবে। এরপর ৯ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেখা যাবে ডিমগুলোর মাথা কালো বা লালচে ধরনের হয়ে গেছে এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে দুটো করে বাচ্চা বের হতে দেখা যাবে।
লার্ভা ও বাচ্চাঃ ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর ২০ থেকে ২২ দিন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখতে হবে। যেন বাচ্চাগুলো শক্তিশালী হতে পারে। এদেরকে তাপমাত্রা যুক্ত জায়গায় রাখলে এরা চারবারের মতো খোলস পাল্টা। সবশেষে এরা প্রণালীতে পরিণত হয়।
প্রণালীঃ এরমধ্যে এরা সহজে চলাচল করতে পারে না বলে এরা বেশি সংক্রমিত হয় এর ফলে এরা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে নড়া নারী করতে শুরু করে এরপরে এরা ছিদ্র হয়ে বের হয়ে আসে। তারপর গুটি সংগ্রহ করতে হবে এবং ৩-৪ দিন পর পর পরীক্ষা করতে হবে যে গুটি তৈরি হয়েছে কিনা। এই সময় এরা খট খট শব্দ করে। যখন এটি পরিপূর্ণ লাভ করবে তখন গরম পানির মধ্যে পোকা গুলো ছেড়ে দিতে হবে ও পোকাগুলো মেরে ফেলে গুটি গুলোকে সংগ্রহ করতে হবে।
রেশম পোকার জীবন চক্র
রেশম পোকা চাষ করার জন্য, প্রথমে তুত গাছ রোপন করতে হয়। রেশম পোকার সাদা তুঁত খুব পছন্দ।তবে তুঁত কয়েক ধরনের হয় যেমন সাদা তুঁত লাল ও কালো তুত । রেশম পোকা তুঁত পাতা থেকে নিজের মধ্যে সুতার উৎপাদন করে। ডিম ফুটে যখন লার্ভা হয় তখন পাতা খাইয়ে উৎপাদন করে লার্ভা সাধারণত ২০ থেকে ২৫ দিন থাকে।
রেশম পোকা সুতা তৈরির জন্য কয়েকটি নিয়ম অবলম্বন করে। যে ধারাবাহিক ধাপ সমূহ অতিক্রম করার মাধ্যমে কোন জীব জাইগোট দশা থেকে প্রজনন ক্ষম পূর্ণাঙ্গ দশায় পরিণত হয় তাকে বলা হয় রেশম পোকার জীবন চক্র। এ চক্রটি মূলত চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেমন ডিম সংগ্রহ , লার্ভা, মুলকিট ও পূর্ণাঙ্গ মথ । এ জীবন চক্রটি আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারবো।
ডিম সংগ্রহঃ উড়ন্ত অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ পুরুষ ও স্ত্রী রেশম মথ , স্ত্রীর দেহে ডিম পাড়ে এবং জাইগোটে পরিনত হয় ও পুরুষ মথ মারা যায়। এরপর স্ত্রী ডিম পারবে এবং ডিম পাড়ার জন্য জায়গাটি অবশ্যই কাগজের জায়গা ও বাঁশের ডালা হতে হবে। এতে স্ত্রী ডিম গুলো পারবে তা মূলত কাগজের গায়ে আঠার মত লেগে যাই। স্ত্রী মথ ৩০০-৫০০ টি ডিম পাড়ে। ডিম গুলো দেখতে সরিষার দানার মত ও রং হলুদ।
লার্ভাঃ লার্ভা গুলো দেখতে মূলত সরু ও ছোট হয় এবং এর রং হয় বাদামী রঙের। এদের মাথায় সংবেদী শৃঙ্গ ও বক্ষে সন্ধিযুক্ত এবং নখর যুক্ত পা থাকে। এই নখোর গুলো খাওয়ার সময় তারা তুত পাতাগুলোকে ধরে রাখে। আবার এদের দেহে সন্ধিযুক্ত উপপদ থাকে যা এদেরকে চলনে সহায়তা করে। লার্ভা গুলো ক্রমে ক্রমে বড় হতে থাকে এবং এরা চারবার খোলস পরিবর্তন করে থাকে। পরিণত অবস্থায় লার্ভা গুলো ৬০ মি. মি লম্বা হয়। এক্ষেত্রে বড় গুটি তৈরি হলে উন্নত মানের রেশম পাওয়া সম্ভব।
মুলকিটঃ লার্ভা দশা শেষ হওয়ার পর মুল কিট এর ধাপ শুরু হয়। লার্ভা দশা শেষের দিকে পোকাগুলো পাতা খাওয়া বন্ধ করে দেয় বলে এদের দেহগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এ সময় এরা নিজে দের দেহের দিকে বারবার মাথা ঘুরায় এবং গুটি তৈরি করে। এরপর এর লালা গ্রন্থি থেকে রস বের হয় যা সুতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
পূর্ণাঙ্গ মথ ঃ এ মথ এর মাথায় একজোড়া বড় পালকের মত সুর থাকে এবং বুকে তিন জোড়া পা ও পিঠে দুই জোড়া পাখা থাকে তবে এরা বেশি দিন ভালোভাবে উড়তে পারেনা। পুরুষ মূলত একদিন এবং স্ত্রী তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
রেশম পোকা থেকে সুতা তৈরির প্রক্রিয়া
রেশম পোকাকে গুটি থেকে সরানোর জন্য একটি আলাদা জায়গা লাগে যেখানে ৩-৪ দিন পর পর গুটি গুলোকে ছাড়াতে হয়। গুটি ছাড়ানোর জন্য অবশ্যই তাপ দিতে হবে এবং এগুলোকে মেরে ফেলতে হয়। গুটির সাথে সুতা আটকে থাকে কারণ এর সাথে এক ধরনের আঠা থাকে।
এরপর সুতা বারবার ঘুরিয়ে চরকিতে পেচাতে হয়। যাকে বলা হয় কাঁচা সুতা। একটা গুটি থেকে মূলত ৪০০-১০০০ মিটার সুতা পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে রেশম চাষ করা হয় এবং রেশম চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়।
রেশম চাষ কোন জেলায় হয়
রেশম চাষের পদ্ধতি অনেক সহজ এবং অর্থনৈতিক ভাবে অনেক গুরুত্ব থাকায় অনেক দেশ রেশম চাষ করে থাকে। বাংলাদেশেও রেশম চাষ করা হয়। তবে রাজশাহী শহরে বেশি চাষ করা হয়। তাই রাজশাহী রেশম শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এ চাষের মূল উদ্দেশ্য হল রেশমি সুতা তেরি করা। আর এ সুতা দিয়ে রেশম কাপড় বানানো হয়।
রেশমি কাপড়ের দাম অনেক বেশি এবং এ কাপড় বিদেশে রপ্তানি করে অনেক মূলধন পাওয়া যায় যা বাংলাদেশের জন্য আয়ের একটি বড় উৎস। রেশম চাষের সুবিধা বেশি বলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দিক আরো বেশি সামনের দিকে এগোচ্ছে।
রেশম পোকার প্রজাতি
বর্তমানে অনেকেই রেশম চাষ পদ্ধতিকে বেছে নিচ্ছে কারণ বিশ্ব বাজারে রেশমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। রেশম পোকার চার ধরনের প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো-
- এন্ডি পোকা
- মুগা কিট
- তসর পোকা
- অ্যান্থেরা
এন্ডি পোকা গুলো মূলত শিমুল কাঠালী পাতা খেয়ে থাকে। এসব সুতার রং সাদা ও লালচে বাদামী ধরনের হয়। আবার মুগা কিট জঙ্গলে বাস করে এবং জঙ্গলের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। কুল ও সাল এদের প্রধান খাদ্য এদেরকে বেশিরভাগ সিলেটে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায়। আবার এদের কোন প্রজাতি কে জাপানেও পাওয়া যায় যেগুলো রেশম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রেশম পোকার রোগ ও চিকিৎসা
ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ও বিভিন্ন ধরনের পরজীবীর আক্রমণে রেশম পোকা রোগ হয়ে থাকে। এছাড়াও রসা-রোগ, কটা রোগ ও সুক কিট রোগ হয়ে থাকে যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ রোগের চিকিৎসা পাওয়ার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রথমত এই পোকা দমন করার জন্য যে কীটগুলো রয়েছে সেগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে। তারপর জীবাণু যুক্ত কীট গুলোকে ভালো পানিতে ধুয়ে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং আস্তে আস্ত কিট গুলোকে মেরে ফেলতে হবে তবে পরবর্তী বীজ উৎপাদন করার জন্য কিছু কিট রেখে দিতে হবে কারণ ৭০০০ টা গুটি থেকে মাত্র ১ কিলোগ্রাম সুতা পাওয়া যায়। তাই রেশম চাষ করার সময় সাবধানে থাকতে হবে যেন কোন ভাবে রেশমে পোকা আক্রমণ না করে।
পরিশেষে
রেশম চাষ আমাদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক একটি চাষ পদ্ধতি। এ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। রেশম চাষের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে দেখা যায় যে এটি একটি অর্থকারী ফসল। কেননা এটির মাধ্যমে যেমন আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ঠিক তেমনি রেশমি সুতা ও রেশমি বস্ত্র এবং রেশমি কাপড় বিদেশে রপ্তানি করে আমরা অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।
গ্রাম অঞ্চলে যাদের অনেক জমি জমা আছে এবং চাষ করার সুযোগ আছে তাদের উচিত রেশম চাষ করে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া। তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে রেশম চাষের পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বসহ সকল বিষয় জানতে পারবেন। এবং নিয়মিত তথ্যমূলক আরো পোস্ট পেতে www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url