OrdinaryITPostAd

আলুর চাষ পদ্ধতি এবং আলু চাষের উপযুক্ত সময়

আলু বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। এবং আলু দৈনন্দিন খাবারের প্রতিটি খাবারের একটি অপরিহার্য অংশ। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আলুর চাষ পদ্ধতি এবং আলু চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আলু-সেচ-পদ্ধতি

শীতকালীন ফসলের মধ্যে আলু অন্যতম। তাই কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের দিকে আলুর চাষ শুরু করতে হয়। আলু বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতে চাষ করা হয়ে থাকে। তাই আলুর চাষ পদ্ধতি এবং আলু চাষের উপযুক্ত সময়, আলুর রোগ ও প্রতিরোধের বিষয়গুলো জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

আলু চাষের আধুনিক পদ্ধতি

আলু বাংলাদেশের একটি অর্থকারী ফসল। ধান ও গমের পরে আলুর স্থান। আলু বাংলাদেশের  একটি  জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ অন্য সবজির পাশাপাশি আলু চাষ করেন। বেশিরভাগ চাষিরা আলু চাষে আগ্রহী।

প্রতি বছর যে পরিমাণে আলু উৎপাদন করে হিমাগারে রাখা হয় সেটা হিসাব অনুযায়ী অনেক বেশি তবুও দিন দিন আলুর চাহিদা এত পরিমাণে বাড়ছে যে বাজারে আলুর দাম কম হচ্ছে না। এর প্রতি বছর কৃষক ছাড়াও অনেকে আলু চাষ করছেন।

বর্তমানে আলু চাষ করার জন্য আধুনিক পদ্ধতি চালু হয়েছে। আলু চাষের আধুনিক পদ্ধতিগুলো নিচে দেওয়া হল-

মাটি নির্বাচনঃ আলু চাষ করার জন্য প্রথমে মাটি নির্বাচন করতে হবে। বেলে এবং দোআঁশ মাটিতে আলু সবচেয়ে ভালো চাষ হয়। যে মাটিতে সূর্যের আলো বেশি পরিমাণে পড়ে আলু চাষের জন্য সে মাটি নির্বাচন করা দরকার।

আবার যে সকল জমিতে বা মাটিতে সেচ ব্যবস্থা ভালো হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকবে সে সকল জমি আগে নির্বাচন করতে হবে। এরপর মাটি গুলো আড়াড়ি চাষ করতে হবে এবং মই দিয়ে মাটিগুলো ঝুরঝুরে করে প্রস্তুত করে নিতে হবে।

লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাটি গোটা না হয়ে থাকে এবং কমপক্ষে চারটি করে চাষ দিতে হবে। যদি মাটি গোটা হয়ে থাকে তাহলে মাটি চাষ করতে অসুবিধা হবে। কারণ চাষ করার সময় এই গোটা গোটা মাটিগুলো আলুর সঠিক বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করবে।

জাত পরিচিতিঃ মাটি নির্বাচন করার পর জাত নির্বাচন করতে হবে। কারণ আগে থেকে নির্বাচন করে নিতে হবে যে কোন জাতের আলু চাষ করতে হবে। নির্বাচন না করলে ভিন্ন ভিন্ন জাতের আলু চাষ করলে ফলন ভালো হবে না আর এটি চাষ করা সম্ভব না।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত আলুর মোট ৮৩ টি চার নির্ধারণ করেছেন। আলুর বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে যেমন খাবার আলু, রপ্তানি যোগ্য আলু, প্রক্রিয়াজাতকরণ আলু, আগাম আলু ও তাপমাত্রার সংরক্ষণ করা আলু।

বীজ আলু শোধনঃ এরপর মাটি ঠিক করার পর এবং জাত পরিচিতি জানার পর বীজগুলো শোধন করতে হবে। এর জন্য বীজগুলোকে ৪৮ ঘন্টা হিটিং কক্ষে রাখতে হবে। এরপর সেখান থেকে এনে বাড়িতে ২৪ ঘন্টা বস্তা খুলে বাতাস লাগাতে হবে। 

কারণ যদি বস্তার মধ্যে রেখে দেওয়া হয় তাহলে আলো গুলো ঘেমে পচে যাবে। যদি বীজশোধন হয় না থাকে তাহলে আলুর যে রোগ গুলো রয়েছে সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য ৩ শতাংশ বোরিক এসিড মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট পানির মধ্যে ভিজিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকাতে হবে।

রোপন পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে বীজ শোধনের পর যে অঙ্কুর গুলো গজাবে সেগুলোর মাথা ভেঙে যেতে হবে। কারণ প্রথম কুড়ি না ভাঙলে পরবর্তীতে নতুন কুড়ি গজানোর সুযোগ পাবে না। এর জন্য ৩০-৪০ গ্রামের আলু ব্যবহার করা উত্তম। তবে কেটেও রোপণ করা যাবে।

বীজ লাগানোর ২-৩ দিন পর আলু গুলোকে গুলোকে কেটে ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে এর ফলে আলুর উপর একটা পাতলা পোলেপ পড়বে এবং আলুর রোগ জীবাণু দূর হয়ে যাবে এবং আলুগুলো সতেজ থাকবে। বাংলাদেশ ১৫ কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ন মাসে আলুর উপর করা হয়।

সার ব্যবস্থাপনাঃ বাংলাদেশ আলু চাষ করার জন্য বিভিন্ন উন্নত মানের সার ব্যবহার করা হয়। এই সারগুলো হল ইউরিয়া, টিএসপি, জিংক সালফেট, জিপসাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, বোরন এবং গবর। এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়।

পরিচর্যাঃ আলু চাষ করার জন্য পরিচর্যা ঠিক রাখতে হবে তা না হলে ভালো ফল হবে না এবং আর্থিক দিক থেকে ক্ষতি সম্মুখীন হবে। বীজ রোপণের পর দেখতে হবে যেন রস না থাকে এবং কোনোভাবেই যেন আলুতে পানি না থাকে।

খেয়াল রাখতে হবে যেন ২-৩ অংশ পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। এর জন্য দুই থেকে তিনটা সেচ দিতে হবে এরপর জমি থেকে আলু উঠানোর ৭-১০ দিন আগে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই রোগ আক্রমণ করতে না পারে।

বীজআলু জমিতে বাছাইকরুনঃ একটি মানসম্পন্ন বীজ রোপন করতে হবে যেন ভালো মানের ফসল পাওয়া যায়। বীজ আলু উৎপাদন করার জন্য রগিং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর জন্য গাছের বয়স ৩০-৩৫ বছর হতে হবে।

সঠিকভাবে রগিং না হলে আলুর গুনাগুন কমে যায়। এবং বিভিন্ন রোগবালায় আক্রমণ করে। এর জন্য সতর্কতার সাথে  আলুর গাছ তুলতে হবে। সাধারণত সকাল ও বিকাল বীজ আলু বাছাইয়ের জন্য উপযুক্ত সময়।

আলু সংগ্রহের ব্যবস্থাপনাঃ শুষ্ক উজ্জ্বল এবং আলোতে আলু ব্যবস্থাপনা করতে হবে। পুরো জমিতে একসাথে আলু উত্তোলন করা যাবে না। একটি একটি করে লাইনে এবং এক শাড়ি করে লাঙ্গল দিয়ে উত্তোলন করতে হবে।

আলুগুলো তোলার পর রোদে রাখা যাবে না। প্রাথমিকভাবে আগে কাটা পচা এ আলুগুলো বাছাই করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন আলো উঠানো সময় আলো গুলো কেটে কেটে না যাই। এরপর ভালো আলু বাছাই করে চটের বস্তা গুলোর মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে হবে এবং মুখ গুলো সুতা দিয়ে সেলাই করে নিতে হবে।

আলু চাষের উপযুক্ত সময়

কার্তিক অগ্রহায়ণ এ দুই মাস মিলে হেমন্তকাল। আর ১৫ কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ণ পর্যন্ত আলু লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় আলু চাষে জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এ সময় আলু লাগালে আলুর ভালো ফলন পাওয়া যায়।
আবার এই সময়ের আগেও পরে আলু লাগানো যায় কিন্তু এভাবে লাগালে ফলন ভালো নাও হতে পারে আবার অনেক সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে আলুর ক্ষতি হতে পারে। তাই আলু চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হিসাবে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে আলো লাগানো উচিত।

আলু চাষের সেচ প্রয়োগ পদ্ধতি

আলুর ভালো ফলনের জন্য এবং অধিক পরিমাণে আলু পাওয়ার জন্য আলুর চাষ পদ্ধতি জেনে আলু চাষ করা উচিত এবং সঠিক সময়ে আলু লাগানো উচিত। আর সময়মতো আলুর সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে আলু চাষ করতে হবে। আলু চাষের সেচ প্রয়োগ পদ্ধতি নিচে দেওয়া হল-

আলু-চাষের-সেচ-প্রয়োগ-পদ্ধতি

  • বীজ রোপনের পর খেয়াল করতে হবে যে জমিতে পরিণত রস আছে কিনা। যদি পরিমিত রস না থাকে তাহলে জমিতে সেচ দিতে হবে। এবং অতিরিক্ত পানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • জমিতে সেচ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে পানিতে ভেলির ২/৩ অংশ পর্যন্ত ডুবে যায়। এছাড়াও জমিতে মোট ২-৩ টি সেচ দিতে হবে। একটি ২০-২৫ দিনের মাথায়। এবং অপরটি ৪০-৪৫ দিনের মাথায় আলু বৃদ্ধির সময় সেচ দিতে হবে।
  • জমি থেকে আলু উঠানোর ৭-১০ দিনের পূর্বে জমিতে সেচ প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
  • খেয়াল রাখতে হবে যে, দাদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলুর রোপনের পর ৩০-৫০ দিনের সময়ে জমিতে কোন অবস্থায় রসের ঘাটতি এবং ৬০-৬৫ দিনের পরে রসে আধিক্য হতে দেওয়া যাবে না।

আলু রোপনের পরবর্তী পরিচর্যা

আলু রোপণের পরে আলুর গাছের যত্নের উপর নির্ভর করে যে আলু কি পরিমান ভালো ফলন দিবে। তাই আলুর রোপনের পরবর্তী পরিচর্যা নিচে দেওয়া হল-
  • আলুর জমি সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করে দুই সারির মধ্যবর্তী স্থানে লুকিয়ে উপরে পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • সার মিশ্রত মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে গোপন সময় যাতে আলুর শিকড় কেটে না যায় এবং মাটি দেওয়ার সময় গাছের পাতা যেন মাটির নিচে চাপা না পরে।
  • ৫৫-৬৫ দিন পরে প্রয়োজন হলে আবার আগাছা পরিষ্কার করে মাটি তুলে দিতে হবে। এছাড়াও পরবর্তী কোনো কারণে আলু মাটির উপর দেখা গেলে। মাটি দিয়ে আলু ও গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।
  • গাছে রোগ বালাই বা পোকার আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
  • বেশি রোগে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে জমি থেকে দূরে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। তাহলে আলু গাছের মড়ক রোগ সহ বিভিন্ন রোগ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।

জমি থেকে আলু উঠানোর নিয়ম

জমিতে আলু লাগানোর পরে আবার জমি থেকে আলো উঠানো বা সংগ্রহ করার নিয়ম সঠিকভাবে না জানলে আলু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আলু চাষ পদ্ধতি জানার মাধ্যমে আলু জমি থেকে উঠানো নিয়ম ভালো করে জানতে হবে। যেমন-
  • রোদেলা ও শুষ্ক আবহাওয়াতে জমি থেকে আলু তুলতে হবে।
  • এক সারির পর আর এক সারি কোদাল বা লাঙ্গল দিয়ে আলু উঠাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে আলুতে যেন কোনভাবে আঘাত না পাই। 
  • আলু উঠানোর পর অতিরিক্ত রোদে আলু রাখা যাবে না। প্রথমেই মাঠে আলু বাছাইয়ের মাধ্যমে কাটা, ফাটা আলু, পচা আলু বাতিল করে আলাদা রাখতে হবে। ভালো আলু সাথে মিশিয়ে রাখা যাবে না।
  • মাঠে আলু তোলার সময় বস্তায় বা ঝুড়িতে ভালো করে সাবধানতার সাথে আলু নিয়ে আসতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন আলু ফেটে বা থেতলিয়ে না যায়।
  • এবং আলু সঠিকভাবে বস্তায় ভরে রাখতে হবে। যেন আলু পচে না যায়।

আলুর ব্যাকটেরিয়া ও মড়ক রোগের লক্ষণ

আলুর বীজ জমিতে বপন থেকে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে থাকে। তাই আলুর ব্যাকটেরিয়া ও মড়ক রোগের বিভিন্ন লক্ষণ নিচে দেওয়া হল-
  • আলুর মড়ক রোগ ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স  ছত্রাক দ্বারা আক্রমিত হয়ে থাকে।
  • এ রোগের আক্রমণে প্রথমে পাতায় ছোপ ছোপ ভেজা হালকা সবুজ গোলাকার বা এলোমেলো দাগ দেখা যায়। যা দ্রুত কালো হয়ে পচে যায়। গাছের কান্ড এবং টিউবারেও এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়।
  • সকাল বেলা মাঠে গেলে পাতার নিচে সাদা সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক দেখতে পাওয়া যায়।
  • মড়ক রোগের তীব্র আক্রমণে সম্পূর্ণ জমির ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • নিম্ন তাপমাত্রা এবং কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়া দ্রুত গাছ মড়ক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং কান্ড পৌঁছে যায়। ২-৩ দিনের মধ্যেই আলুর মড়ক রোগ আক্রান্ত গাছ মরে যায়।
  • আক্রান্ত টিউবারের গায়ে ও ভেতরের অংশে গাঢ় বাদামী থেকে কালচে দাগ পড়ে।
  • ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের যেকোনো সময় এই রোগের আলু গাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে।

আলুর রোগ প্রতিরোধের উপায়

আলুর বীজ বপন ও সংরক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই আলুর চাষ পদ্ধতি ভালো করে জানতে হবে এবং আলু সঠিক সময়ে আলু চাষ করতে হবে। আলু রোগ প্রতিরোধের উপায় নিচে দেওয়া হল- 

  • রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত যেমন বারী  আলু -৪৬, এবং বারি আলু-৫৩,ও বারি আলু-৭৭ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  • শাড়িতে ভালোভাবে মাটি উঁচু করে দিতে হবে। 
  • আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে এবং আগে সংগ্রহ করতে হবে।
  • নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধের জন্য ৭ থেকে ১০ দিন অন্তত ম্যানকোজেন গোত্রের ছত্রাকনাশক যেমন ডাইথেন এম-৪৫ ইদ্রফিল ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম প্রে করে দিতে হবে। 
  • জমিতে রোগ দেখা মাত্রই সাতদিন অন্তর অন্তর নিম্নের যেকোনো একটি ছত্রাক নাশক স্প্রে করে দিতে হবে-
-সিকিউট দুই গ্রাম।
-এক্রোভেট এন জেড ২ গ্রাম ,অথবা
-মেলোডি ডুয় চার গ্রাম এবং এর সাথে সি কিওর দুই গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে দিতে হবে, অথবা
-এক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম এবং এর সাথে সিকিওর এক গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে দিতে হয়। ই

আলু সংরক্ষণ পদ্ধতি

আলু একটি খুবই সুস্বাদু সবজি। । এটি এমন একটি সবজি যা খেয়ে কোন মানুষ অরুচি হয় না।প্রতিবছর কৃষকেরা অনেক আলু চাষ করে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে। নিচে আলু সংরক্ষণের উপায় লেখা হলো-
  • আলুর বীজ বপনের ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে আলু সংরক্ষণ করা যায়। 
  • আলুর বীজ বপনের ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে আলুর গাছ কেটে দিতে হয়।। এর ফলে গাছগুলোর রোগপ্রকার আক্রমণ খুবই কম হয়। এবং আলো গুলো আরো দ্রুত পরিপক্কতা অর্জন করে।
  • গাছের নিচে আলু তৈরি হওয়ার 10 থেকে 12 দিন পর গাছের উপরের দিকে পাতা প্রথমে শুকাতে শুরু করে তখনই আলু সংগ্রহ করার সঠিক নিয়ম।
  • আলু সকালের দিকে সংগ্রহ করা উত্তম বিকেলের দিকে তোলা উচিত না।
  • বৃষ্টি বা মেঘলা দিনে আলু সংগ্রহ করা একদমই উচিত না। কড়া রোদের দিনে আলো সংগ্রহ করা ভালো।
  • মাটি থেকে আলু তোলার পর আলু রৌদ্রে রাখা যাবে না। আলু তোলার পর পর আলুগুলোকে বস্তাবন্দি করে রাখতে হবে।
  • এমন কোন বস্তায় রাখা উচিত নয় যে বস্তায় আলোর খোসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • কোন বিশেষ কারণে যদি আলুগুলোকে ক্ষেতের মধ্যে স্তুপ আকারে রাখতেই হয় তাহলে স্তূপের উপর চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।
  • উপযুক্ত বায়ুচলো চুলের ব্যবস্থা রয়েছে এমন ঘরে আলু সংগ্রহ করতে হয়।
  • যেই ঘরে আলু রাখা হয় সেই ঘরটি অবশ্যই শুকনা রাখতে হবে। 

মজাদার সবজি আলু থেকে কিছু খাবার তৈরির রেসিপি

আলু খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সবজি প্রত্যেকেই আলু খেতে খুব পছন্দ করে। আলু থেকে মজার মজার খাবার তৈরি করা যায়।যেমন-
আলুর-তৈরি-মাজাদার-রেসিপি
আলু থেকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরির পদ্ধতি 
  • প্রথমেই আলু খোসা ছাড়িয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • এবার আলুগুলো ৭-৭.৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং 1 মিটার চওড়া করে খালিফালি করে কেটে নিতে হবে।
  • আলুর টুকরা গুলোকে সামান্য লবন দিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।
  • অন্য একটি হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে লবণের দ্রবণে ভেজানো আলু গুলোকে উঠিয়ে ওই ফোটানো পানিতে তিন থেকে চার মিনিট রাখতে হবে।
  • ব্লাকিং করা আলুর ফালি গুলোকে পানি থেকে উঠিয়ে ঠান্ডা করে রাখতে হবে।
  • ফুটন্ত ডুবো তেলে আলুর টুকরা গুলোকে ভেজে নিতে হবে তেল থেকে উঠিয়ে অতিরিক্ত তেল টিস্যু পেপার দিয়ে চুষে নিতে হবে।
  • অবশেষে ভেজে রাখা আলুগুলোর উপর লবণ ছিটিয়ে টমেটো কে চাপ দিয়ে পরিবেশন করা যাবে।
  • যদি সংরক্ষণ করতে হয় তাহলে ব্লাঞ্চিং করা আলুর ফালি গুলো থেকে পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা করে বায়ু যদি ফ্রিজে রাখার উপযোগী বক্স বা পলিব্যাগে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে এভাবে দুই মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
আলু থেকে চিপস তৈরির পদ্ধতি
  • সর্বপ্রথমে আলুগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়িয়ে সামান্য পানিতে লবণ মিশিয়ে আলুগুলো ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • এবার ক্লাই প্লিসার দিয়ে আলু গুলোকে খুব পাতলা করে কেটে নিতে হবে। এবং পুনরায় আলুগুলোকে লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • এবার এবার পাতলা করে কেটে রাখা আলুগুলোকে ফুটন্ত পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। লবণ পানিতে রাখা আলুগুলো স্লাইসগুলোকে তিন থেকে চার মিনিট ব্লাস্টিং করে নিতে হবে।
  • আলুর স্লাইড গুলো পানি ঝরিয়ে শুকনো করে রাখতে হবে।
  • অন্য একটি পাত্রে পাঁচ লিটার পানির সাথে সোডিয়াম মেটাবাই সালফাইভে এক ঘন্টা ডুবে রাখতে হবে।
  • এবারে আলুগুলো অন্য পাত্র তুলে নিয়ে শুকনা করে করা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • ভালোভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে বায়ু রোধে পাত্রে মুখ বন্ধ করে আলোর স্লাইস গুলো সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করলে দুই বছর এর বেশি আলু ভালো থাকে।
  • আলুর চিপস খাওয়ার জন্য আলুর টুকরা গুলোকে ডুবন্ত তেলে ভেজে নিতে হবে।
  • লাল করে ভাজা হয়ে গেলে উঠিয়ে নিতে হবে তেল থেকে। বেশি তেল থাকলে টিস্যু পেপারে আলগা তেল গুলো শুকিয়ে নিতে হবে।
  • অবশেষে আলুর চিপস গুলোর ওপর বিট লবণ বা টমেটো কেচাপ দিয়ে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হবে মজাদার খাবার আলুর চিপস ।

পরিশেষে

আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে নিশ্চয় জানতে পেরেছেন আলু চাষ পদ্ধতি এবং আলু চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু। আরো জানতে পেরেছেন আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে এই আর্টিকেলটির মধ্যে আরও আছে আলু সম্পর্কে মজাদার রেসিপি।

আলু চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে এবং আলুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য ও আরো রয়েছে আলুর বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে অনেক তথ্য।প্রতিনিয়ত তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন www.jarinonline.com ওয়েবসাইটটি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url