OrdinaryITPostAd

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি - ঝিনুক চাষের ১০টি অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মুক্তা একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আর বর্তমানে এই মুক্তা আমরা ঝিনুক চাষের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। তাই বর্তমানে ঝিনুক চাষ করে অনেকেই লাভবান হতে চাই। আর আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি এবং ঝিনুক চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিস্তারিত আলোচনা করব।
মুক্তা-চাষ

বাংলাদেশের উৎপাদিত মুক্তা বিশ্ববাজারে অনেক বেশি চাহিদা সম্পন্ন। সারা বিশ্বে অসংখ্য প্রজাতির মুক্তা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে মুক্তা চাষ করার জন্য অবশ্যই ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি জানতে হবে। এছাড়াও ঝিনুক চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি।

মুক্তা কি

মুক্তা হলো একটি দামি রত্নবিশেষ। এই রত্নটিকে ইংরেজিতে Pearl বলা হয়। মুক্তাকে অনেক মানুষ মতি বলে চেনে এই পাথরটি দেখতে খুবই সুন্দর হয়। এই মতি পাথরটি শামুক জাতীয় উদ্ভিদ ঝিনুকের ভেতরে তৈরি হয়ে থাকে। তবে সব ধরনের ঝিনুকের পেটের মধ্যে মুক্ত তৈরি হয় না শুধু মাত্র মাসল জাতীয় ঝিনুকের পেটের মধ্যে মুক্তা তৈরি হওয়া সম্ভব।

মাসল জাতীয় ঝিনুকের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট কোনকারলিন ক্যালসাইট যা মুক্তা তৈরিতে সাহায্য করে। জীবন্ত ঝিনুক যখন খাদ্যের জন্য মুখ খোলে সেই সময় তার মুখের মধ্যে খাবারের সাথে বালুকণা চলে যায়। এই বালুকনাকে সে অনেক চেষ্টা করেও তার ভেতর থেকে বের করতে পারে না। 
ঝিনুকের ভেতরে থাকা বালুকণার জন্য ঝিনুকের মধ্যে প্রদাহ বা জ্বলনের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এই জ্বলনের জন্য ঝিনুকের গায়ে থাকা সাদা কণাগুলো গলে যেতে শুরু করে। গলতে গলতে এক পর্যায়ে এই সাদা অংশগুলো জমা হয়ে যায় এবং কঠিন পদার্থের পরিণত হয় যা বাইরে বের করলে মুক্তা হয়।

মুক্তা দেখতে ছোট এবং সাদা রংয়ের হয়ে থাকে তবে অন্যান্য রঙে মুক্তাও রয়েছে সাদা রঙের মুক্তা বেশি তৈরি হয়। আসল মুক্তা মসৃণ গোলাকার হয়। তবে বেরোক পারল জাতীয় মুক্তা বিভিন্ন আকার আকৃতির ও বিভিন্ন রঙের হতে পারে।

মুক্তার তৈরি অলংকার সকল মেয়েরাই পছন্দ করে। মুক্তাকে অলংকারের রানী বলা হয়। যেই ঝিনুকে মুক্তা চাষ হয় সেই ঝিনুক সমুদ্র এবং বড় নদীতে বেশি পাওয়া যায় কিন্তু বর্তমান সময়ে পুকুরে চাষ করা হয়।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি 

পুরা পৃথিবী জুড়ে চাশকৃত ঝিনুক প্রায় ৫ প্রজাতির পাওয়া গেছে। এই পাঁচ প্রজাতির ঝিনুক চাষ করে মুক্তা উৎপাদন করা হচ্ছে। ভিয়েতনামে এক প্রজাতির ঝিনুক সম্পর্কে গবেষণা চলছে যে এই প্রজাতি ঝিনুক চাষ করে মুক্তা তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা। 
মুক্তা-চাষ-পদ্ধতি
ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু নিম্নরূপঃ
  • ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করতে হলে প্রথমে ব্যক্তিকে উক্ত বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে এজন্য একটি প্রশিক্ষণ নেওয়া আবশ্যক।
  • এরপর মুক্তা চাষের জন্য পুকুর অথবা ট্যাংকি নির্বাচন করতে হবে যেখানে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করা যাবে। যেখানে প্রতিবছর ৪ ফুট জল থাকবে তাহলেই সেই পুকুর বা ট্যাঙ্কে মুক্তা চাষ করা যাবে।
  • এবার সেই পুকুর বা ট্যাঙ্কে মুক্তা চাষের জন্য ঝিনুক ছাড়তে হবে ঝিনুক ছাড়ার জন্য অবশ্যই ঝিনুকটিকে পরীক্ষা করে নিতে হবে। ঝিনুকের ক্ষেত্রে কুকুর অথবা অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করা যাবে এছাড়াও ঝিনুক কিনেও ছাড়া যাবে।
  • পুকুরে ছাড়ার পর ঝিনুকটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার না হয়। ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার হওয়ার পর ঝিনুকটিকে অপারেশন বা পর্যবেক্ষণ এর জন্য আলাদা করতে হবে। 
  • অপারেশন বলতে ঝিনুকের ভেতরে থাকা একটি বিশেষ পদার্থকে ২ মিটার কেটে নিয়ে অন্য একটি ঝিনুকের ভেতরে দিতে হবে।
  • সেই পুকুরে যদি মাছ চাষ করা হয় তাহলে ঝিনুকের জন্য আলাদাভাবে কোন খাবার প্রয়োজন হবে না। মাছের থেকে উৎপাদন করা খাবার ঝিনুকের জন্য উপযুক্ত হবে। ঝিনুকের পর্যবেক্ষণ হবার পর ঝিনুকটিকে পুকুরের মাঝে দড়ি দিয়ে এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার নিচে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
  • এক বিঘার পুকুরে তিন থেকে চার হাজার ঝিনুক চাষ করা যায়। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কুকুরের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ থাকে। এবং মাঝে মাঝে পুকুর থেকে ঝিনুক উঠিয়ে অবশ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঝিনুকের জন্য খাদ্য আছে কিনা সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ঝিনুক চাষ হবার পর বিক্রির জন্য প্রতি ঝিনুকের দাম ৩০০ থেকে শুরু করে আরও বেশি হয়ে থাকে। তবে ঝিনুকের দাম নির্ধারিত হয় তার কোয়ালিটির উপর। ঝিনুক যদি দেখতে অনেক সুন্দর হয় তাহলে তার দাম অনেক বেশি হবে।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

মুক্তা হলো বর্তমান সময় একটি দামি পাথর । এই পাথর অলংকার তৈরির কাজে লাগে। মুক্তা দেখতে অনেক সুন্দর হয়। মুক্তার তৈরি অলংকার বর্তমান সময়ে অনেক দামি। মুক্তাকে অলংকারের রানী বলা হয় কারণ মুক্তা পাথর বিভিন্ন রঙের অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। 

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ নিচে লেখা হলোঃ

ঝিনুক নির্বাচনঃঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার জন্য প্রথমে মুক্তা চাষের জন্য ঝিনুক নির্বাচন করতে হবে। উচ্চমানের ঝিনুক নির্বাচন করলে  উচ্চমানের মুক্তা তৈরি হবে। আর মুক্তা যদি সুন্দর হয় তাহলে মুক্তার দাম অনেক বেশি হয় তাই ঝিনুক নির্বাচন মুক্তা চাষের জন্য একটি অন্যতম বড় কাজ।

নিউক্লিয়েশনঃ নিউক্লিয়শন হলো ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের বড় প্রক্রিয়া য় যা শুরু হয়  ঝিনুক এর এক পর্যায়ে যখন ঝিনুকটিকে সামান্য পরিমাণে ফাক করে  মাদার-অফ-পাল বা প্লাস্টিক পুঁতি ঝিনুকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার এছাড়াও ঝিনুকের ভিতরে ঝিনুকের খোসার একটু অংশ তার ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেও এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। নিউক্লিয়াসন হল ঝিনুকের ভেতরে নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানো।
ইমপ্লান্টেশনঃ ইমপ্ল্যান্টেশন হলো ঝিনুকের ভেতরে নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানোর পর ঝিনুক গুলোকে উপরে বা ট্র্যাঙ্কের দড়ি দিয়ে এক থেকে দেড় মিটার নিচে  ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

মুক্তা তৈরির জন্য সময়ঃ মুক্তা তৈরি হওয়ার জন্য অনেক অনেকটা সময় দরকার হয়। কেননা ঝিনুক মুক্তা তৈরি করার জন্য অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে থাকে। তাই মুখটা তৈরির জন্য এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে এই এক থেকে দেড় বছর এর মধ্যে যে রোগ থেকে সুন্দর সুন্দর মুক্তা তৈরি হয়।

ঝিনুকের গেটিংঃ  ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা তৈরি হবার পর ঝিনুক গুলোকে যত্ন সহকারে পুকুর থেকে উঠানো হয় উঠিয়ে ঝিনুকের ভিতর থেকে খুব সাবধানে মুক্তাগুলা বের করা হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে ঝিনুকের গ্রেটিং বা ফসল কাটা বলে।

মুক্তা পালিশঃ মুক্তা গুলো বের হবার পর মুক্তগুলোকে সুন্দর করার জন্য পালিশ করতে হয় পালিশ করার পর মুক্তাগুলো অনেক চকচকে এবং সুন্দর দেখতে লাগে।

বাজার জাতঃ মুক্তা গুলো করার পর বাজারে বিক্রির জন্য একদম তৈরি। মুক্তাগুলা দেখতে যেমন সুন্দর হবে তার দাম তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী একটি মুক্তার দাম ৩০০ থেকে এর উর্ধ্বে হয়ে থাকে।

ঝিনুকের ম্যান্টল টিস্যু অপারেশনের প্রয়োজনীয় উপকরণ

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন। এবং এই গুরুত্বপূর্ণ। কাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণের প্রয়োজন হয়। যেমন-

ঝিনুক কাটার ছুরিঃ ঝিনুকের পেশি কাটার জন্য এই ছুরি ব্যবহার করা হয়। ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন জন্য এই পেশি কাটা হয়।

ভোতা মাথার চিমতাঃ ম্যান্টল টিস্যু ঝিনুক থেকে আলাদা করতে এটি ব্যবহৃত হয়।

কাচিঃ ম্যান্টল টিস্যুর কিনারের লাইন কাটার জন্য কাঁচি ব্যবহার করা হয়।

ম্যান্টল টিস্যু কাটার ছুরিঃ ম্যান্টল টিস্যু বর্গাকৃতিতে কাটার জন্য এই ছুরি ব্যবহার করা হয়।

স্পঞ্জঃ অপারেশনের সময় দেহ থেকে ম্যান্টল টিস্যু আলাদা করার জন্য এবং ঝিনুকের আঠালো পদার্থ পরিষ্কার করার জন্য স্পঞ্জ ব্যবহৃত হয়।

ট্রেঃ অপারেশনের যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।

গ্লাসবোর্ডঃ ম্যান্টল টিস্যু টুকরো করার জন্য গ্লাসবোর্ড ব্যবহার করা হয়।

ড্রপার ও বোতলঃ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য ড্রপার এবং বোতল ব্যবহার করা হয়।

ম্যান্টল টিস্যু আলাদাকরণ সূচঃ ঝিনুকের দেহ থেকে ম্যান্টল টিস্যু আলাদা করতে এই সুচ ব্যবহার করা হয়।

ঝিনুক খোলার যন্ত্রঃ অপারেশনের জন্য ঝিনুকের মুখ খোলা রাখতে এটি ব্যবহৃত হয়।

স্কালপেলঃ ম্যান্টল টিস্যুতে পকেট তৈরি করার কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

স্ট্যাপলঃ ঝিনুকের মুখ খোলা রাখতে এটি ব্যবহৃত হয়।

হুক আকৃতির মাথার সুচঃ টিস্যু স্থান্তরের সময় পকেট তৈরির জন্য এই সুচ ব্যবহার করা হয়।

অপারেশনের তাকঃ অপারেশন চলাকালীন সময়ে ঝিনুক ধরে রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

অপারেশনে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান গুলো হল-

আজুমিনঃ টিস্যু আর্দ্র অবস্থায় রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

বিটাডাইনঃ কাটা অংশের ক্ষত নিরময়ে বিটাডাইন ব্যবহৃত হয়।

অ্যালকোহলঃ অপারেশনের যন্ত্রপাতি অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। কেননা বর্তমান সময়ে মুক্তা একটি মূল্যবান রত্নবিশেষ। প্রায় সময় সাধারণ মুক্তা পাথর পাওয়া যায় তবে মুক্তার রঙ যদি অন্য ধরনের হয় তাহলে সেই মুক্তার দাম আরো বেশি বেড়ে যায়।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

বর্তমান সময়ে মুক্তা একটি মহামূল্যবান রত্নবিশেষ। অলংকারের দিক দিয়ে হীরার পরে মুক্তার স্থান রয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ দের কথা অনুযায়ী জানাযায় সারা বছর প্রায় এক টন গোলাপী মুক্তা চাষ করা যায়। সাদা মুক্তা থেকে গোলাপি মুক্তার দাম ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে সাদা মুক্তা পাথর এর দাম ৩০০ থেকে এর উর্ধ্বে হয়ে থাকে।

কুতুবদিয়া ও টেকনাফ অঞ্ছলে বেশির ভাগ মুক্তা চাষ হচ্চে।তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী জানা গেছে প্রতিবছর ২০,০০০ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাই ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার মাধ্যমে। বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে ঝিনুক থেকে মুক্ত চাষ করা যাচ্ছে সে অঞ্চলগুলো হল-কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ,সনাদিয়া,কুতুব্দিয়া, থেকে মুক্তা চাষ করছে অনেক মানুষ।
পটুয়াখালীতে ঝিনুক থেকে মহামূল্যবান পদার্থ তৈরি করা হচ্ছে এর মধ্যে অন্যতম হলো লাইটসেট, ঝাড়বাতি, টেবিল ল্যাম্প, পর্দা, কানের দুল, চুরি, গলার অলংকার, চুলের ক্লিপ, অনেক ধরনের পুতুল ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে ঝিনুক থেকে তৈরি মহামূল্যবান পাথর থেকে।

মুক্তা পাথর এর তৈরি জিনিসপত্রের অবদান দিন দিন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের মনে মুক্তার জন্য এক ধরনের আকর্ষণ কাজ করে তাই অলংকার হিসেবে মুক্তার তৈরি অলংকারকে সকলে পছন্দ করছে। বর্তমান সময়ে মুক্তা চাষ করলে প্রচুর পরিমাণে লাভবান হচ্ছে মুক্তা চাষীরা। এজন্য মুক্তা চাষ করলে প্রচুর পরিমাণে রোজগার করা যায়।

ঝিনুক থেকে তৈরি মুখ তার যেমন কদর রয়েছে অনেক বেশি ঠিক তেমনি ঝিনুক থেকে তৈরি মানুষের ও বেশি কদর রয়েছে অনেক মানুষ তৈরি মাংস খেতে পছন্দ করছে ।তাই ঝিনুকের তৈরি মাংসের দামও অনেক বেশি। ঝিনুকের খোলস থেকে পান খাওয়ার চুন তৈরি হয়।

 ঝিনুকের চূর্ণ থেকে তৈরি হয় গবাদি হাঁস মুরগি এবং পশুপাখি খাদ্য যা খেয়ে তাদের স্বাস্থ্য এবং মাংসের গুনাগুন অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাই। তবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ অনেকেই গুরুত্ব দেয় না এইজন্য ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ শিল্পের স্থান অর্জন করতে পারছে না।

পৃথিবীতে অনেক মানুষ রয়েছে যারা বেকার তাদের জন্য মুক্তা চাষ একটি অন্যতম কাজ যার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় এবং অনেক মানুষ যদি ঝিনিক থেকে মুক্ত চাষ করে তাহলে এই কাজটি একটি শিল্পের স্থান অর্জন করবে।

আসল মুক্তা চেনার উপায়

ঝিনুক থেকে তৈরি মহামূল্যবান রত্নকে মুক্তা বলে বর্তমান সমাজ থেকে মুক্তা চাষ করে অনেক চাষী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে তবে অনেকেই প্রতারণার করে নকল মুক্তা সৃষ্টি করছে। তাই আসল মুক্তা চেনা একটি বড় কাজ। তবে কয়েকটি উপায়ে আসল মুক্তা খুব সহজে চেনা যায়।

আসল মুক্তার দাম বাজারে প্রচুর বেশি তাই অনেক মানুষ রয়েছে যারা নকল মুক্তার সৃষ্টি করে বাজারে বিক্রি করছে। নকল মুক্তা বিক্রি করে প্রচুর প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে তাই যারা মুক্তা কেনে তাদেরকে অবশ্যই আসলমুক্তা চিনতে হবে।

আসল মুক্তা চেনার কয়েকটি উপায় নিচে দেওয়া হল-
  • যেহেতু ঝিনুক থেকে মুক্তা পানিতে তৈরি হয় এজন্য আসল মুক্ত হাতে নিলে কিছুক্ষণ এর জন্য ঠান্ডা অনুভব হয়। যদি মুক্তা হাতে নেওয়ার পর ঠান্ডা অনুভব না হয় তাহলে ধরা যাবে সেই মুক্তাটি নকল বা কাচের তৈরি অথবা প্লাস্টিকের তৈরি একটি নকল পাথর। 
  • মুক্তা সবসময় অনেক কাছ থেকে দেখতে হয় কারণ আসল মুক্তা কখনোই সব দিক থেকে সমান হয় না এবং নিখুত হয় না। আসল মুক্তা পাথর সব সময় অসমান হয় তাই অনেক কাছ থেকে মুক্তা দেখলে যদি পরিষ্কার সচ্ছদ এবং চারিদিক সমান মনে হয় তাহলে সেই মুক্তা পাথরটি নকল বলে গণনা করা যাবে।
  • মুক্তা পাথরকে সরাসরি আলোর নিচে ধরলে অনেক ধরনের রঙের প্রতিফলন সৃষ্টি করে। অপরদিকে নকল মুক্তা আলোর নিচে ধরলে সেই পাথরটি চকচক করবে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের আলোর প্রতিফলন সৃষ্টি করবে না তাই এই পরীক্ষাটিকে মুক্তা পাথর এর রং পরীক্ষা বলে। আসল মুক্তা পাথরের এরমধ্যে সবুজ এবং গোলাপি রঙের মিশ্রণ থাকবে।
  • আসল মুক্তাগুলো নকল মুক্তার থেকে তুলনামূলকভাবে ভারী হয়ে থাকে। আসল মুক্তা হাতে নিলে ওজন বোঝা যায় কিন্তু নকল মুক্তা হাতে নিলে অনেক হালকা লাগে তাই মুক্তার ওজন পরীক্ষা করেও আসল অথবা নকল বিবেচনা করা যায়।
  • আসল মুক্তা পাথর খুব কম গোলাকার হয়ে থাকে বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন আকৃতির হয় যেমন কোনটা লম্বা কোনটা ডিম আকৃতির কোনটা চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। নকল মুক্ত পাথর সব সময় গোলাকৃতির হয়। কারণ গোলমুকতা পাথর এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয়ে থাকে।অনেক সময় মুক্তার আকৃতি বিবেচনা করেও আসল অথবা নকল বোঝা যায়।
  • আসল মুক্তা দাঁতের সাথে ঘষলে এক অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যায়। তবে নকল মুক্তাকে দাঁতের সাথে ঘষলে গ্লাস যুক্ত এবং মসৃণ মনে হবে।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের মূল বিষয়

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ অনেক লাভজনক একটি উৎপাদন। কিন্তু ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের অনেকগুলো বিষয় থাকে যা ভালো করে জানতে হবে। এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের মূল বিষয়গুলো নিচে দেওয়া হল-
  • মুক্তা চাষ করার জন্য অবশ্যই প্রথমে ভালো করে মুক্তা চাষের উপরে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
  • মুক্তা চাষের জন্য পুকুর বা ট্যাংক নির্বাচন করতে হবে। এবং পুকুরে তিন থেকে চার ফুট পানি সর্বদা থাকতে হবে। আর ট্যাংক নির্মাণ করলে পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ঝিনুক গুলো সংগ্রহ করতে হবে খাল বিল বা নদী থেকে এবং কিনতে চাইলে ভালো মানের ঝিনুক কিনতে হবে তারপর পুকুরে ছাড়তে হবে।
  • পুকুরে পানির তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা নিয়মিত চেক করে দেখতে হবে।
  • এবং ঝিনুকের ভেতর মুক্তার আকার দেওয়ার জন্য অপারেশন ১০ মিনিটে করতে হবে এবং পরে দেখতে হবে সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
উপরোক্ত মূল বিষয়গুলো ভালো করে খেয়াল করে মুক্তা চাষ করতে হবে।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের জন্য প্রশিক্ষণের শর্তাবলী

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করে অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। তবে ঝিনুক থেকে মুক্ত চাষ করার জন্য অবশ্যই সঠিকভাবে  জানতে হবে ঝিনুক থেকে কিভাবে মুক্তা চাষ করলে মুক্তার গুনাগুন ভালো হয়।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণের শর্তাবলী গুলো হল-
  • প্রশিক্ষনার্থীদের মাছ, ঝিনুক চাষ এবং পুকুর বা পানি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
  • অংশগ্রহণকারীদের বয়স ১৮-৫০ বছরের মধ্যে থাকতে হবে।
  • অংশগ্রহণকারীদের মুক্তা চাষের জন্য পুকুর অথবা ট্যাংক এবং নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে।
  • নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
  • সকল জায়গার অংশগ্রহণকারীদের সমান বিবেচনা করা হবে।

নারীর ক্ষমতায়নে মুক্তা চাষের গুরুত্ব

নারীর ক্ষমতায়নে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি। ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে জানলে। ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে নারীরা অনেক বেশি স্বাবলম্বী হতে পারবে। নারীর ক্ষমতায়নে মুক্তা চাষের গুরুত্ব নিচে দেওয়া হলো-
নারীর-ক্ষমতায়নে-মুক্তা-চাষ
  • মুক্তা চাষ একটি নারীদের জন্য উপযোগী প্রযুক্তি। ঘরে বসে সংসারের কাজের ফাঁকে নারীরা ঝিনুক থেকে সহজে মুক্তা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
  • ম্যান্টল টিস্যু অপারেশন পদ্ধতি অনেকটা সুদ শিল্পের মত। আর মহিলারা যেহেতু সহজেই সুচের কাজ করে থাকে তাই তারা অনেক বেশি ভালো করে ঝিনুকের এই কাজটি করতে পারে।
  • বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিন চার দিনের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে মহিলারা সহজেই এই অপারেশন করতে পারে। তাই তারা এই কাজটি খুব সহজেই করতে পারে।
  • ঝিনুকের অপারেশন ও মুক্তা চাষের কলা কৌশল শেখার জন্য অনেক বেশি শিক্ষার প্রয়োজন হয় না তাই নারীরা সহজে এই মুক্তা চাষ করতে পারে।
  • আবার গ্রামের বেশিরভাগ প্রতিটি বাড়ির সাথে ছোট বড় অনেক পুকুর থাকে ফলে নারীরা সহজেই
  • এই মুক্তা চাষ করতে পারে। কারণ এটার জন্য বাড়তি কোনো ঝামেলার প্রয়োজন হয় না।
  • মুক্তা চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি ঝিনুকের অপারেশন আর এই কাজটি নারীরা খুব সহজে আনন্দের সাথে করে থাকে যেটা পুরুষরা সহজে করতে পারে না।
  • মাছের সাথে মুক্তা চাষে ঝিনুকের জন্য আলাদা কোন খাবারের প্রয়োজন হয় না। ফলে এর জন্য আলাদা খরচ না থাকায় নারীদের কোন বিনিয়োগ করতে হয় না। ফলে তারা সহজেই এই কাজে যুক্ত হতে পারে।
  • আবার অনেক মুক্ত আছে যেগুলো অলংকারের কাজে ব্যবহৃত হয় না সেগুলো ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে মুক্তা চাষে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।
  • শহর ও গ্রামের অনেক বেকার তরুণী আছে যারা মুক্ত দেশের প্রশিক্ষণ নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।

পরিশেষে

ঝিনুক থেকে মুক্তা একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে বর্তমানে মুক্তা চাষের মাধ্যমে অনেকে এই শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছে। মুক্তা চাষ করে বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব। তাই সম্ভাবনাময় এই শিল্পের গুরুত্ব অনেক নারী এবং পুরুষে কে স্বাবলম্বী করে তুলছে।

ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি এবং ঝিনুক চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সহ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। নিয়মিত তথ্যমূলক আরো আর্টিকেল পেতে www.jarinonlne.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url